এবার কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের সব সূচক নিম্নমুখী

এসএসসি পরীক্ষায় ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর কুমিল্লা জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীদের উল্লাসছবি: প্রথম আলো

এবারের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে সব সূচকেই খারাপ করেছে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। পাসের হার, জিপিএ-৫, শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিভাগভিত্তিক ফল—সব ক্ষেত্রেই পিছিয়ে এই বোর্ড। চার বছরের মধ্যে এবারই প্রথম পাসের হার ৮০ শতাংশের নিচে নেমেছে।

আজ শুক্রবার সকালে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. আসাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত ফলাফলে উল্লেখ করা হয়, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ছয় জেলার ১ হাজার ৭৭৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ১ লাখ ৮২ হাজার ৬৩৫ জন এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ১ লাখ ৪৩ হাজার ২১৬ জন উত্তীর্ণ হয়। পাসের হার ৭৮ দশমিক ৪২। ছেলেদের পাসের হার ৭৮ দশমিক ৭৯, মেয়েদের পাসের হার ৭৮ দশমিক ১৪। শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭৯।

এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১ হাজার ৬২৩ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছেলে ৪ হাজার ৭০৫ ও মেয়ে ৬ হাজার ৯১৮ জন। বিভাগওয়ারি ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এবার বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার সবচেয়ে বেশি, ৯৫ দশমিক ৮৪। অন্যদিকে মানবিকে পাসের হার ৬১ দশমিক ৮৪। আর ব্যবসায় শিক্ষায় ৭৯ দশমিক ১১। মানবিক বিভাগে পাসের হার কমায় সার্বিকভাবে এ বোর্ডে পাসের হার কমেছে।

এবার গতবারের তুলনায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে। এবার পাসের হার ৭৮ দশমিক ৪২ শতাংশ হলেও গতবার ছিল ৯১ দশমিক ২৮। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১৯ হাজার ৯৯৮ জন, যা চলতি বছরের তুলনায় ৮ হাজার ৩৭৫ জন বেশি। এ ছাড়া এবার শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে ১৩২। সর্বশেষ ২০১৮ সালে পাসের হার ছিল ৬৫ দশমিক ৪২। চার বছর পর এবারই প্রথম ৮০ শতাংশের নিচে নামল পাসের হার।

জেলাভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চাঁদপুর জেলায় পাসের হার সবচেয়ে বেশি, ৮৫ দশমিক ২১। তবে জিপিএ-৫ বেশি কুমিল্লা জেলায়, ৪ হাজার ৯৭৬ জন। শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কুমিল্লায় ৩৫টি। নোয়াখালী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাসের হার ৭০ শতাংশ হওয়ায় সার্বিকভাবে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের ফলাফলের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে।

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. জামাল নাছের প্রথম আলোকে বলেন, সুশৃঙ্খলভাবে এবার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), শিক্ষা কর্মকর্তাসহ পরীক্ষার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতদের নজরদারির কারণে এবার ভালো পরীক্ষা হয়েছে। তবে সব ব্যাচে একই ধরনের শিক্ষার্থী থাকে না। তা ছাড়া এবার পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে পরীক্ষা হওয়ায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে।

এদিকে কুমিল্লা জিলা স্কুল, কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে এবার শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। সরেজমিনে সকালে ফলাফল ঘোষণার পর বাদ্যযন্ত্রের তালে এসব স্কুলের শিক্ষার্থীদের নাচানাচি করতে দেখা গেছে। কুমিল্লা জিলা স্কুলের শিক্ষার্থী আদনান হাসান, ইশতিয়াক আহমেদ বলে, ‘প্রত্যাশিত ফল পেয়েছি।’

নবাব ফয়জুন্নেছা উচ্চবিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, ‘আমার পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। মেয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে।’ জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুল হাফিজ বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে পুরো সিলেবাস শিক্ষার্থীরা আয়ত্ত করতে পারেনি। যে কারণে জিপিএ-৫ একটু কমেছে। তবে সার্বিক ফলাফলে তিনি সন্তুষ্ট।

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর এ বছর সব বিষয়ে ও পূর্ণ মানবণ্টনে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় এবং মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে খারাপ করায় ফলাফল খারাপ হয়েছে।