রেললাইনে খণ্ডিত লাশের সঙ্গে পড়ে ছিল স্কুলব্যাগ, পাশে দাঁড়ানো ছিল লাল সাইকেল

ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যুর খবরে ভিড় করেছেন আশপাশের বাসিন্দারা। আজ রোববার দুপুরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার মাগুড়া ইউনিয়নের সেনপাড়া এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

নির্জন এলাকার রেললাইনে পড়ে ছিল স্কুলের পোশাক পরা কিশোরের খণ্ডিত মরদেহ। পাশে পড়ে ছিল স্কুলব্যাগ। লাইনের পাশে দাঁড়ানো ছিল তার লাল রঙের বাইসাইকেলটি। মুহূর্তেই খবর ছড়িয়ে পড়লে ভিড় করেন আশপাশের লোকজন।

আজ রোববার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পঞ্চগড় সদর উপজেলার মাগুড়া ইউনিয়নের সেনপাড়া এলাকায় পঞ্চগড়-ঢাকা রেললাইনে এ ঘটনা ঘটে। দিনাজপুরের পার্বতীপুর জংশন রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে আসা পঞ্চগড়গামী কাঞ্চন কমিউটার ট্রেনে কাটা পড়ে ওই স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।

অন্তর চন্দ্র বর্মণ
ছবি: সংগৃহীত

মারা যাওয়া স্কুলছাত্রের নাম অন্তর চন্দ্র বর্মণ (১৫)। সে সদর উপজেলার মাগুড়া ইউনিয়নের ধনিপাড়া এলাকার বীরেন্দ্র নাথ বর্মণের একমাত্র ছেলে। অন্তর পঞ্চগড় জেলা শহরের করতোয়া কালেক্টরেট আদর্শ শিক্ষা নিকেতনের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল। তার বাড়ি ঘটনাস্থল থেকে অন্তত সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে। কীভাবে সে ট্রেনে কাটা পড়েছে, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য কেউ জানাতে পারেনি। তবে চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করতে পারে বলে ধারণা করছেন স্বজন ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ট্রেনে কাটা পড়ার স্থান থেকে সামান্য দূরে ঢেকে রাখা হয়েছে খণ্ডিত লাশ। চারদিকে দেখতে আসা মানুষের ভিড়। লাশের পাশে বসে আছেন স্বজনেরা। ঘটনার বিষয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলছেন পঞ্চগড় সদর থানার পুলিশ সদস্যরা।

মাগুড়া ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ ও সেনপাড়া এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, দুপুরে তিনি রেললাইনের পাশের সড়ক দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে যাচ্ছিলেন। তখন স্কুলড্রেস পরা একটা ছেলেকে লাল রঙের সাইকেল দাঁড় করে রেখে রেললাইনের কালভার্টের ওপর বসে থাকতে দেখেন। তিনি প্রায় ৩০০ গজ দূরে যাওয়ার পরই কাঞ্চন ট্রেনটি পঞ্চগড়ের দিকে যাচ্ছিল। ট্রেনটি চলে যাওয়ার পর পেছনে তাকিয়ে দেখেন, কালভার্টের পাশে সাইকেলটি দাঁড়ানো আছে, কিন্তু ছেলেটি নেই। বিষয়টি দেখে সন্দেহ হলে একটু এগিয়ে গিয়ে দেখেন, ছেলেটা লাইনের ওপর পড়ে আছে। পরে স্থানীয় লোকজন নিয়ে কাছে গিয়ে দেখি, ছেলেটা ট্রেনে কাটা পড়েছে। পরে তাঁরা বিষয়টি পুলিশকে জানান।

অন্তর চন্দ্র বর্মণের স্বজনদের আহাজারি। আজ রোববার দুপুরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার মাগুড়া ইউনিয়নের সেনপাড়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

নিহত স্কুলছাত্র অন্তরের চাচা সন্তোশ চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘অন্তর সকালে বাড়ি থেকে স্কুলের পোশাক পরে বের হয়েছিল। আমরা ভেবেছি, স্কুলে গেছে। কিন্তু সে যে স্কুলে না গিয়ে বাড়ির উল্টো দিকে এই ফাকাঁ এলাকায় এসেছে, সেটা কেউ জানি না। পরে শুনি, সে ট্রেনে কাটা পড়েছে। এখানে এসে লাশ দেখে আর সাইকেলটা দাঁড়ানো দেখে মনে হয়েছে, সে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিতে পারে। তবে বাড়িতে তো তাদের কোনো ঝগড়াঝাঁটিও শুনিনি। কেন এমন ঘটনা ঘটল, সেটা বুঝতে পারছি না।’

মাগুড়া ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য লতিফুল ইসলাম বলেন, স্কুলব্যাগে রাখা খাতায় নাম লেখা দেখে তাঁরা পরিচয় নিশ্চিত হন। তাঁরা শুনেছেন, অন্তরকে গত রাতে তার বাবা স্মার্টফোন ব্যবহার করতে নিষেধ করেছিলেন। তার কাছ থেকে মুঠোফোনটি নিয়ে রেখে দিয়েছিলেন। আজকে সকালে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সকালে সে ফোন না চেয়েই স্কুলড্রেস পরে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। এরপর দুপুরে তার এমন মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।

দিনাজপুর রেলওয়ে থানার দায়িত্বে থাকা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রায়হান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।