নীলফামারীর জলঢাকা
এলাকাবাসীর বানানো কাঠের সাঁকোয় এক হলো দুই গ্রাম
সাত লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে কাঠের সাঁকোটি তৈরি করতে। রড–সিমেন্টের খুঁটি করে ওই সাঁকোটি নির্মাণে সময় লেগেছে প্রায় দুই মাস।
নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের ঘুঘুমারী ও খুটামারা ইউনিয়নের হরিশচন্দ্র পাঠ গ্রাম দুটিকে আলাদা করেছে চারালকাটা নদী। ওই নদীর নাওঘাট স্থানে একটি সেতুর স্বপ্ন দেখছিলেন এলাকাবাসী। দীর্ঘদিনেও তাঁদের সে দাবি পূরণ হয়নি।
তাই সেতুর অপেক্ষায় বসে না থেকে দুই ইউনিয়নের বাসিন্দারা নিজেদের প্রচেষ্টায় সেখানে নির্মাণ করেছেন ২৯০ ফিট কাঠের সাঁকো। সাঁকোটি দেখতে এখন দূরদূরান্তের মানুষ সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন।
গত বুধবার নাওঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, লোকজন সাঁকো দিয়ে হেঁটে, সাইকেল ও মোটরসাইকেল দিয়ে নদী পার হচ্ছেন। অনেকে আসছেন সাঁকো দেখতে। তাঁরা সাঁকোতে উঠে ছবিও তুলছেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, এই সেতুর অভাবে নদীর দুই প্রান্তের মানুষ অতিরিক্ত ১৫ কিলোমিটার ঘুরে চলাচল করতেন। এ কারণে সেখানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানান তাঁরা। প্রায় ১৫ বছর আগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) উদ্যোগে সেখানে একাধিকবার মাপজোখ করা হয়েছে। কিন্তু সেতু আর হয়নি। সম্প্রতি সেখানে একটি বাঁশের সাঁকো করার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য (নীলফামারী-৩) রানা মোহাম্মদ সোহেল দুই লাখ টাকা অনুদান দেন। কিন্তু ওই টাকায় সাঁকো হয় না। এরপর স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ঘুঘুমারী সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে স্থানীয় লোকজনের আর্থিক সহযোগিতায় সাত লাখ টাকা ব্যয়ে সেখানে একটি কাঠের সাঁকো তৈরি করা হয়। রড–সিমেন্টের খুঁটি করে ওই খুঁটির ওপর কাঠের সাঁকোটি নির্মাণে সময় লাগে প্রায় দুই মাস।
ঘুঘুমারী গ্রামের বাসিন্দা আজিজার রহমান (৭২) বলেন, ‘পদ্মা সেতু থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা নিজেদের চেষ্টায় কাঠের সাঁকো তৈরি করে আমাদের স্বপ্ন পূরণ করেছি।’
হরিশচন্দ্র পাঠ গ্রামের মো. দেলোয়ার হোসেন (৪৮) বলেন, তাঁরা অনেক দিন ধরে সেতুর জন্য আবেদন করেছেন। পাঁচবার মাপজোখও হয়েছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এখন তাঁরা চাঁদা সংগ্রহ করে এই সাঁকোটা করতে পেরেছেন। কিন্তু এটা তো সমাধান না। বড় বন্যা হলে সাঁকোটা ভেঙে পড়তে পারে। তখন আবারও সমস্যায় পড়তে হবে। তাই তাঁরা চান সরকার এখানে একটা পাকা সেতু করে দিক।
স্থানীয় লোকজন বলেন, সাঁকোর উত্তরে শিমুলবাড়ি, বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ, রাজবাড়ি, ডিয়াবাড়ি, ঘুঘুমারী, বালাপুকুর, মীরগঞ্জ হাট, জলঢাকা উপজেলা সদরসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থান। দক্ষিণে হরিশচন্দ্র পাঠ, নীলফামারী জেলা সদরের লক্ষ্মীচাপ, রামগঞ্জ, টুপামারী ও জেলা সদর। শিমুলবাড়ি থেকে এই পথে নীলফামারী জেলা সদরের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। ঘুরে গেলে ৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। এ ছাড়া নদীর দুই প্রান্তেই অনেক কৃষকের জমি আছে। তাঁদের জমির ফসল ঘরে তুলতে ১০ কিলোমিটার পথ ঘুরে আসতে হয়। সাঁকো হওয়াতে সমস্যা কিছুটা হলেও কমেছে।
ঘুঘুমারী সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের সদস্য মো. মোমিনুর রশিদ বলেন, ঘুঘুমারী গ্রামের অসহায় দরিদ্র মানুষের কল্যাণের জন্য ২০১৮ সালের ১৬ জুন এ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। সাত লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি করতে দুই মাস লেগেছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নীলফামারী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফিরোজ হাসান বলেন, সেতুটি নির্মাণের বিষয়ে এখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে গুরুত্ব বিবেচনায় পরে কোনো প্রকল্পের মাধ্যমে এ সেতুটি নির্মাণ করা হবে।