যশোরে ঝোপঝাড়ের নিচে ১২০০ বছর আগের স্থাপনা
সমতল ভূমি থেকে কিছুটা উঁচু ঢিবি। ঢিবিটি একসময় ছেয়ে ছিল ঝোপঝাড়ে। যশোরের মনিরামপুর উপজেলার খেদাপাড়ায় ধনপোতা ঢিবিতে এখন চলছে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন। খননে প্রাচীন স্থাপনার চিহ্ন বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে দুটি চওড়া ইটের দেয়ালের সন্ধান পাওয়া গেছে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের দল ধনপোতা ঢিবির আবিষ্কার করেছে। ধনপোতা ঢিবিতে পাওয়া ইটের সঙ্গে কেশবপুরের ভরতভায়নার ভরতের দেউল এবং মনিরামপুরের দোনার এলাকার দমদম পীরের ঢিবির ইটের সঙ্গে মিল রয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষকদের ধারণা, এ স্থাপনা আনুমানিক ১ হাজার ২০০ বছর আগের। খননকাজ শেষ হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে বলে তাঁরা জানান।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনা বিভাগীয় কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০০৬ সালে মনিরামপুর উপজেলার দমদম পীরের ঢিবিতে খননকাজ করা হয়। তখন একটি অনুসন্ধানে উপজেলার খেদাপাড়া ধনপোতা ঢিবির সন্ধান পাওয়া যায়। গত ১০ ডিসেম্বর ধনপোতা ঢিবির খননকাজ শুরু হয়েছে। প্রথমে ছয়জন শ্রমিক একটি বর্গে খননকাজ শুরু করেন। এখন ১৭ জন শ্রমিক ৮টি বর্গে খননকাজ করছেন। খননের দ্বিতীয় দিনেই একটি দেয়ালের সন্ধান মিলেছে। পরে আরও একটি দেয়ালের সন্ধান পাওয়া যায়।
দেয়ালে দুই ধরনের ইট পাওয়া গেছে। একটি ইটের দৈর্ঘ্য ৩২ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ১৬ সেন্টিমিটার এবং উচ্চতা ৫ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার এবং অপরটির দৈর্ঘ্য ৩৬ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ২২ সেন্টিমিটার এবং উচ্চতা ৬ সেন্টিমিটার। দেয়ালের গাঁথুনি কাদার। দেয়ালে চুনের জমাট বাঁধা রয়েছে। এ ছাড়া খননে মৃৎপাত্র, পাথরের টুকরা, বাটি, পশুর হাড় ও লোহার পেরেক পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, আটটি বর্গে খননকাজ চলছে। আরও আটটি বর্গে খননকাজ চালানো হবে। চলতি জানুয়ারি মাসজুড়ে খননকাজ চলবে।
ধনপোতা ঢিবির মালিক খেদাপাড়া গ্রামের ছয় ব্যক্তি। তাঁদের একজন প্রতাপ বিশ্বাস বলেন, ‘ঢিবিটিতে জমির পরিমাণ ৫৭ শতক। ঢিবিটি আমাদের ঠাকুরদাদাদের পৈতৃক সম্পত্তি। আমাদের সাত পুরুষ এখানে কোনো বসতি দেখেননি। ঢিবিটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ঝোপঝাড়ে ভরে ছিল। এখন সেখানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খনন করছে।’
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, খুলনা বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন বলেন, ‘ধনপোতা ঢিবি খননে এখন পর্যন্ত দুটি চওড়া ইটের দেয়ালের সন্ধান পাওয়া গেছে। দেয়ালের গাঁথুনি কাদার। দেয়ালে চুনের জমাট বাঁধা রয়েছে। ধনপোতা ঢিবিতে পাওয়া ইট ও গাঁথুনির সঙ্গে কেশবপুরের ভরতভায়নার ভরতের দেউল এবং মনিরামপুরের দোনার এলাকার দমদম পীরের ঢিবির ইট ও গাঁথুনির সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, স্থাপনাটির আনুমানিক সময়কাল খ্রিষ্টীয় নবম-দশম শতক। খননকাজ চলছে। এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, এটি কী ধরনের স্থাপনা। খননকাজ শেষ হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।