‘এইভাবে আমার বাবজানে লাশ হইয়া বাড়ি আইবে, হেলে যাইতে দিতাম না’

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আল আমিনের বাড়িতে স্বজনদের আহাজারি। আজ শনিবার সকালে
ছবি: সংগৃহীত

‘আমার পোলায় অফিসের মাইনষের লগে ঘুরতে যাইবে হুইন্ন্যা বাধা দেই নাই। হারা (সারা) বছর কষ্ট করে হেইয়ার লইগ্যা। কিন্তু এইভাবে আমার বাবজানে লাশ হইয়া বাড়ি আইবে, হেলে যাইতে দিতাম না।’ বিলাপ করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন নরসিংদীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আল আমিনের (২৯) মা শাহিনা মাশপিয়ারা (৫৬)।

আল আমিনের বাড়ি ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার পাড় গোপালপুর গ্রামে। গত বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার ঘাসিরদিয়া শহীদ মিনার এলাকায় মাইক্রোবাস-পাথরবোঝাই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে আল আমিনসহ সাতজন নিহত হন। নিহত ব্যক্তিরা ঢাকার সাভারে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার এসবি নিটিং লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানার কর্মী ছিলেন।

আরও পড়ুন
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার পাড় গোপালপুর গ্রামের আল আমিন
ছবি: সংগৃহীত

আজ শনিবার সকালে পাড় গোপালপুর গ্রামে নিজের বাড়িতে জানাজা শেষে আল আমিনকে দাফন করা হয়। এতে এলাকার মানুষ ও প্রতিবেশীরা অংশ নেন। এর আগে গতকাল শুক্রবার রাতে এসবি নিটিং লিমিটেড কারখানার কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে আল আমিনের লাশ বাড়িতে আনা হয়।

এলাকাবাসী ও স্বজনেরা জানান, সংসারের হাল ধরতে বছর দুয়েক আগে সাভারের ইপিজেড এলাকার ওই পোশাক কারখানায় রঙের ডিজাইনারের কাজ নেন আল আমিন। তিনি সাত ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড়। তাঁর পাঠানো টাকায় সংসার চলত।
মা শাহিনা মাশপিয়ারা বলেন, সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে ফোন দিয়ে তাঁর শরীরের যত্ন নেওয়ার জন্য বলেন। গভীর রাতে খবর পান, আল আমিন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। সেই থেকেই কান্না আর বিলাপে মূর্ছা যাচ্ছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন

বাবা আবদুল গণি বলেন, ‘আমার সঙ্গে গত বুধবার ছেলের সর্বশেষ কথা হয়েছে। তাঁকে শারীরিক সমস্যার কথা জানালে সে আমার জন্য দুই হাজার টাকা পাঠায়। বৃহস্পতিবার সেই টাকা দিয়ে ওষুধসহ কিছু কেনাকাটা করেছি। কিন্তু শেষ রাতে শুনি, ছেলে আর নেই। কিছুতেই মনটাকে মানাতে পারছি না’, বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন আবদুল গণি।
প্রায় দেড় বছর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদিয়া খাতুনকে বিয়ে করেন আল আমিন। স্বামীকে হারিয়ে সাদিয়াও বাক্‌রুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।

আল আমিনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পরলে গতকাল সকাল থেকেই বাড়িতে ভিড় জমান স্বজনসহ এলাকাবাসী। প্রতিবেশীরা জানান, আল আমিন স্বভাবে অত্যন্ত নম্রভদ্র তরুণ ছিলেন। এলাকার সবাই তাঁকে ভালোবাসতেন। তাঁর এই মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

আরও পড়ুন