বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকায় সড়কের দুই ধারে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় প্রায় অর্ধশত খাবারের দোকান। দুপুরের আগ পর্যন্ত দোকানগুলো কিছুটা ফাঁকা থাকে। কিন্তু বিকেল থেকে ভোজনপ্রিয় মানুষের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে এসব রেস্তোরাঁ। মধ্যরাত পর্যন্ত খাবারের দোকানগুলো ক্রেতাদের ভিড়ে মুখর ও জমজমাট থাকে।
জলেশ্বরীতলার জেলখানা লাবাম্বা মোড় থেকে কালিবাড়ী মন্দির পর্যন্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বাকী সড়কের দূরত্ব আনুমানিক ২০০ মিটার। আবার কালিবাড়ী মন্দির মোড় থেকে ইয়াকুবিয়া মোড় পর্যন্ত শহীদ আবদুল জব্বার সড়কের দৈর্ঘ্য আনুমানিক ৩০০ মিটার। এই ৫০০ মিটার এলাকার দুই পাশে এসব খাবারের দোকান গড়ে উঠেছে। এখানে আছে অভিজাত রেস্তোরাঁ, বিরিয়ানি হাউস, পিৎজা, কেকসহ নানা ফাস্ট ফুডের দোকান। আছে ছোট ছোট চটপটির দোকান, কফিশপ ও জুসবার। এখন শীতকাল হওয়ায় নানা পদের পিঠার ভ্রাম্যমাণ দোকানও দেখা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে এ এলাকা ‘রেস্তোরাঁপাড়া’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।
জলেশ্বরীতলা বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বাকী সড়কে পৈতৃক নিবাসে শৈশব কেটেছে বগুড়া আদালতের আইনজীবী ফজলে এনামের।
এই সড়কের রেজ্জাকুল হায়দার টাওয়ারের মালিক ফজলে এনাম বলেন, নব্বই দশকেও জেলখানা মোড় থেকে কালিবাড়ী মোড় পর্যন্ত সড়কে কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ছিল না। সড়কের দুধারে ছিল আবাসিক বাসাবাড়ি। ২০০০ সালের পর এই সড়কের দুপাশে দু–একটি কোচিং সেন্টার গড়ে উঠতে শুরু করে। আরও পরে জেলখানা মোড়ে গড়ে ওঠে প্রথম খাবারের দোকান। এখন এই সড়কে ২০-২৫টি খাবারের দোকান গড়ে উঠেছে।
এই সড়কের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২০ সালে করোনার বছর তিনেক আগে এই সড়কে বিদেশি খাবারের রেস্তোরাঁ চালু হয়। করোনার পরে সব মিলিয়ে চালু হয় ২০টির বেশি খাবারের দোকান। চালুর অপেক্ষায় আছে আরও বেশ কিছু অত্যাধুনিক রেস্তোরাঁ। মধ্যরাত পর্যন্ত বর্ণিল আলোতে জমজমাট থাকে এসব খাবারের দোকান।
৩০ ডিসেম্বর সরেজমিনে দেখা যায়, বিকেল থেকেই এসব খাবারের দোকানে ভিড় বাড়তে থাকে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যায় ক্রেতার আনাগোনা। ১১টা পর্যন্ত থাকে ক্রেতাদের ভিড়। গরমের সময় ১২টার পরও দোকান খোলা থাকে। এসব খাবারের দোকানে ১০ টাকার সমুচা-শিঙাড়া, ৫০ টাকায় কফি, জুস, লাচ্ছি থেকে শুরু করে হাজার টাকার বিরিয়ানি পাওয়া যায়। আছে পিৎজা, কাবাব, সুপসহ হরেক রকম খাবার।
রেস্তোরাঁমালিকেরা বলেন, তাঁদের বেশির ভাগ ক্রেতা কোচিংফেরত তরুণ-তরুণী আর কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাই তাঁরা সেভাবে দাম রাখেন খাবারের। রেস্তোরাঁয় খেতে আসা কলেজছাত্রী তনুশ্রী রায় বলেন, এই সড়ক এখন রেস্তোরাঁপাড়া। বন্ধুদের সঙ্গে জমজমাট আড্ডা জমে ওঠে এখানকার রেস্তোরাঁয়।
কফি খেতে আসা এলিজা শবনম বলেন, ‘সহপাঠীদের কাছ থেকে নোট লাগলে এখন এসব খাবারের দোকানে আসতে বলি। খেতে খেতে গল্প করি। কোচিংয়ের ফাঁকে এসেও এখানে আড্ডা দিই।’
মেডিকেল কলেজের ছাত্র রাহিদ হাসান বলেন, চটপটি থেকে থাই-ইন্ডিয়ান খাবার, পিৎজা থেকে কাচ্চি বিরিয়ানি সবই পাওয়া যায় এখানকার রেস্তোরাঁয়। ঢাকার বেইলি রোডের খাবারের দোকানগুলোও মধ্যরাত পর্যন্ত জমজমাট থাকে। সে তুলনায় এই সড়ক এখন বগুড়ার ‘বেইলি রোড’ নামে পরিচিত।
শহীদ আবদুল জব্বার সড়কে রয়েছে অভিজাত ফ্যাশন হাউস আর বিপণিবিতান। এর মধ্যে গড়ে উঠেছে হরেক খাবারের দোকান ও রেস্তোরাঁ। বিকেল গড়াতে না গড়াতে খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেন ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকানিও।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে সড়কটি কোচিং সেন্টার আর আসবাবের জন্য বিখ্যাত ছিল। ২০০০ সালের পর বিপণিবিতান গড়ে উঠতে শুরু করে। ২০১০ সালের পর দু-একটি খাবারের দোকান ও রেস্তোরাঁ চালু হয়।
হাল আমলে ‘ফুডকোর্ট’-এর মতো চাকচিক্যময় সাজসজ্জার ছোঁয়া লেগেছে চটপটির দোকানেও। সকাল থেকেই ভিড় জমে এসব চটপটির দোকানে। বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বাকী সড়ক ছাড়াও আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠসংলগ্ন গলিতে তিন-চারটি চটপটির দোকান চালু হয়েছে।