রংপুর বিভাগে বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অর্ধেক, দুর্ভোগ

লোডশেডিং
ফাইল ছবি

রংপুর বিভাগের আট জেলায় ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ প্রায় অর্ধেক থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো)। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরবরাহ কম থাকায় লোডশেডিংয়ের সময়সূচি করা হলেও সেটি মানা সম্ভব হচ্ছে না। বিভাগের জেলা শহরগুলোর তুলনায় গ্রামাঞ্চলের অবস্থা আরও নাজুক। এতে প্রচণ্ড গরমে দুর্ভোগে পড়েছে এই বিভাগের মানুষ।

নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) সূত্র জানায়, রংপুর বিভাগে পল্লী বিদ্যুৎসহ রাতে বিদ্যুতের চাহিদা ৯৫০ থেকে ১ হাজার মেগাওয়াট। আর দিনের চাহিদা ৭৬০ থেকে ৭৮০ মেগাওয়াট। সেখানে আজ বুধবার দিনে বিদ্যুতের সরবরাহ ৫০০ মেগাওয়াট। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাতে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৯০০ মেগাওয়াট। সেখানে সরবরাহ ছিল ৪৫০।  

নেসকো রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী শাহাদত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিভাগের আট জেলায় চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে হাসপাতালসহ জরুরি আরও কিছু জায়গায় সব সময় বিদ্যুৎ-সরবরাহ রাখতে হচ্ছে। ফলে লোডশেডিংয়ের সময়সূচি করা হলেও কিছু কিছু সময় সেটি রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।

শাহাদত হোসেন বলেন, ‘আমরা তো বিদ্যুৎ ধরে রাখতে পারছি না, যা পাচ্ছি, তা-ই কোটা করে বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে। নিয়ম করা হলেও এমন অবস্থার মধ্যে আগে কখনো পড়তে হয়নি। তাই সবকিছু মেইনটেন করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। এরপরও আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

পঞ্চগড় জেলায় গতকাল রাতে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৭৪ মেগাওয়াট। বরাদ্দ ছিল ৪২ মেগাওয়াট। আজ দিনে জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ৫৩ মেগাওয়াট। মিলেছে ২৯ মেগাওয়াট। একই সঙ্গে গাইবান্ধা জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ২৪ মেগাওয়াটের বিপরীতে মিলেছে ১৩ মেগাওয়াট। গাইবান্ধা জেলায় প্রতিটি ফিডারের অধীন এলাকায় প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে তিনবার লোডশেডিং হওয়ার কথা। তবে দিনে ও রাতে গাইবান্ধা শহরের বিভিন্ন এলাকায় কয়েক দফায় এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ থাকছে না। এদিকে পঞ্চগড় পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি ফিডারের আওতাধীন এলাকাগুলোতে এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং স্থায়ী হওয়ার কথা। তবে দিনে কতবার লোডশেডিং হবে, এ বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।

বেলা ১১টার দিকে নীলফামারী জেলা শহরের সবুজপাড়ার বাসিন্দা আল রাফিয়া মুঠোফোনে বলেন, তখন তাঁর বাড়িতে লোডশেডিং চলছে। গতকাল রাতে ১১টার পর দুইবার লোডশেডিং হয়েছে। এরপর ভোরেও বিদ্যুৎ ছিল না। কখনো এক ঘণ্টা আবার কখনো দেড়-দুই ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। রাফিয়া বলেন, রাতে তো সরকারি অফিস-আদালত সব বন্ধ থাকে। কিন্তু তখনো লোডশেডিং হচ্ছে কেন?

বেলা তিনটার দিকে গাইবান্ধা জেলার আইনজীবী বেগম হেলালী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তিনবার লোডশেডিং হয়েছে। প্রতিবারই এক ঘণ্টার ওপর লোডশেডিং স্থায়ী হচ্ছে। আইপিএস ঠিকমতো চার্জ নিতে পারছে না। এই গরমে মানুষের খুব কষ্ট হচ্ছে।

রংপুর জেলায় রাতে বিদ্যুতের চাহিদা ১৫০-১৫৫ মেগাওয়াট। সেখানে গতকাল রাতে বিদ্যুৎ-সরবরাহ ছিল ৭৫ মেগাওয়াট। রংপুরেও গতকাল দিবাগত রাতে একাধিকবার ও আজ ভোরে অধিকাংশ স্থানে বিদ্যুৎ-সরবরাহ ছিল না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আজ সকাল আটটার দিকে নগরের ধাপ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বিদ্যুৎ নেই। যদিও তালিকা অনুযায়ী ওই এলাকায় বেলা দুইটা থেকে তিনটা ও বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা লোডশেডিং হওয়ার কথা। ধাপ এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক সৈয়দ মামুনুর রহমান বলেন, দিনে ও রাতে অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। তাই জেনারেটর দিয়ে হাসপাতালের কার্যক্রম চালু রাখতে হচ্ছে।

ধাপ এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী আবদুল রউফ বলেন, কথার সঙ্গে কাজের কোনো মিল নেই। বিদ্যুতের রুটিন অনুযায়ী সকালে বিদ্যুৎ থাকার কথা, কিন্তু তা নেই। কোনো নিয়মই মানা হচ্ছে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। বাড়ির ফ্রিজে রাখা মাংস গলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

রংপুর নগরের ব্যবসাপ্রধান এলাকা বেতপট্টিতে দুপুর ১২টার দিকে ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি দোকানে জেনারেটর চলছে। তবে ওই এলাকায় বিকেল পাঁচটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত লোডশেডিং হওয়ার কথা। জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী মকসুদার রহমান বলেন, এমনিতেই রাত আটটার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যে দিনের অর্ধেকেরই বেশি সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। ফলে ব্যবসা হচ্ছে না। ক্রেতাদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে।