প্রচণ্ড খরতাপেও পেটের টানে ভুট্টার চাতালে
রংপুরের মিঠাপুকুর হাবিবপুর এলাকার বাসিন্দা আবু সাঈদ (৫০)। জীবনের প্রয়োজনে পেটের তাগিদে প্রচণ্ড খরতাপকে উপেক্ষা করে কাজ করছেন মোলংহাটের একটি চাতালে। ভুট্টা শুকানোর কাজে ছুটে এসেছেন তিনি। স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে তাঁর সংসার। কাজে না গেলে সংসারের খরচ চালানো কষ্টকর হয়ে ওঠে। তাই তো আজ শুক্রবার ছুটির দিন হলেও ছুটে গেছেন ভুট্টার চাতালে।
বৈশাখ পেরিয়ে জৈষ্ঠ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পার হতে চললেও রংপুরে বৃষ্টির দেখা নেই। এক সপ্তাহ আগে সামান্য বৃষ্টি হলেও আবার নতুন করে খরতাপ বইছে। আকাশের দিকে তাকানো যায় না। সেই সঙ্গে বইছে তপ্ত গরম হাওয়া।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা কামরুল হাসান জানান, রংপুরের আকাশে প্রচণ্ড খরতাপ বইছে। আজ বেলা ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিকেলের পর সেই তাপমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে আকাশে মেঘ বা বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই।
প্রচণ্ড খরতাপ আর তাপপ্রবাহে অস্থির হয়ে উঠছে মানুষ। এমন গরমের মধ্যেও কাজের সন্ধানে অনেকেই ছুটে গেছেন মাঠে-ঘাটে, পথে-প্রান্তরে, ধান ও ভুট্টার চাতালে।
জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার মোলংহাটের একটি ভুট্টা শুকানোর চাতালে কাজ করছেন দিনমজুরেরা। তাঁদের বিশ্রাম নেই। সপ্তাহের সাত দিনই তাঁরা ছুটে যান কাজে। কাজ না করলে পরিবারের ভরণপোষণ চালানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। তার ওপর নিত্যপণ্যের দাম দিন দিন বেড়েই চলেছে।
আবু সাঈদের স্ত্রী ও তিন ছেলে মিলে পাঁচজনের সংসার। বড় ছেলে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন। মেজটা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে। ছোটটা স্কুলে যাওয়া শুরু করেনি। তিনি ২০১৩ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৬ বছর সৌদি আরবে নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন। করোনার সময় দেশে চলে এসেছেন। আর যাওয়া হয়নি। বাড়িতে বসে বসে গচ্ছিত টাকাপয়সা শেষ হয়ে গেছে।
আবু সাঈদ বলেন, ‘সন্তানদের পড়ালেখার খরচ চালবার লাগে। চাল, ডাল, তেল, লবণসহ সবকিছুই বাজার থাকিয়া কিনি খাওয়া লাগে। মজুরি পাই প্রতিদিন ৫০০ টাকা। কোনো দিন কাজ বন্ধ রাখলে খাওয়া জোটে না। তারপর অসুখ-বিসুখ আছে। তাই প্রচণ্ড রইদ আর গরমের মধ্যেও চাতালোত আসছি। কাজ করিয়া পরিবার নিয়া ভালোই আছি।’
প্রচণ্ড রোদ আর খরতাপকে উপেক্ষা করে এই চাতালে আরও পাঁচজনকে কাজ করতে দেখা যায়। তাঁদের মধ্যে একজন আবুল কালাম আজাদ (৪৫)। তাঁর স্ত্রী রয়েছে। দুই সন্তান স্কুলে পড়ে। নিজের কোনো আবাদি জমি নেই। প্রতিদিন যা আয়রোজগার হয়, তা দিয়েই চলে তাঁর সংসার এবং সন্তানদের পড়াশোনার খরচ। তিনি বলেন, ‘শখ করিয়া যে একটু ভালো খাবার খামো, তা–ও উপায় নাই। দিনমুজরির ৫০০ টাকা দিয়া চাল, সবজি, লবণ, তেল কিনতে শেষ। তার ওপর হামরা ভালোই আছি।’
প্রখর খরতাপের মধ্যে গ্রামীণ জনপদের মানুষজন খেতখামারে কাজে ছুটে গেছেন। শহরের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় শহরের রাস্তায় সাধারণ মানুষের চলাচল ছিল খুবই কম। রিকশার সংখ্যাও ছিল কম। রিকশাচালকেরা গাছের ছায়ায় বিশ্রামও নিচ্ছেন। সৌরতাপে হাপিত্যেশ হয়ে ওঠার উপক্রম হয়েছে সবার।
জিলা স্কুলের সামনে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিতে নিতে রিকশাচালক সোলেমান মিয়া বলেন, ‘রইদের কারণে শহরোত মানুষ কম। তাই আইজ আয়ও কম হইবে।’