নাইক্ষ্যংছড়িতে আবারও আশ্রয় নিল মিয়ানমারের ২৯ সীমান্তরক্ষী
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) ২৯ সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের নিরস্ত্র করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন ও বিজিবির সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম।
জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, ২৯ জন আশ্রয় নিতে আসা মিয়ানমারের বিজিপি সদস্যকে নিরস্ত্র করে রাখা হয়েছে। তাঁরা বিজিবি ও পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। তাঁদের কোথায় নিয়ে রাখা হবে, এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে বিজিবি থেকে পরে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।
বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের জামছড়ি সীমান্তের ৪৫ নম্বর সীমান্ত পিলারের কাছাকাছি এলাকা দিয়ে সকালে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। ওই এলাকায় নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবির ১১ ব্যাটালিয়নের জামছড়ি সীমান্তচৌকিতে তাঁরা আশ্রয় চান। বিজিবি সদস্যরা তখন তাঁদের নিরস্ত্র করেন এবং পার্শ্ববর্তী নুরুল আলমের চা–বাগানে আশ্রয় দেন। ওই ২৯ জন মিয়ানমারের কোন ক্যাম্প থেকে এসেছেন, তা জানা যায়নি। জামছড়ি সীমান্ত এলাকাটি অত্যন্ত দুর্গম। ওই এলাকা নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে।
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার জানিয়েছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কয়েক দিন ধরে গোলাগুলি চলছে। আরাকান আর্মির যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াইয়ে টিকতে না পেরে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে তারা আশ্রয় নিতে এসেছে। দুই পক্ষের লড়াইয়ে কয়েক দিন বিজিপির বেশ কয়েকটি সীমান্তচৌকি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্যাম্পের সদস্যরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। তীব্র খাবার ও চিকিৎসা–সংকটের মধ্যে তাঁরা আর টিকে থাকতে পারছেন না বলে সীমান্তের ওপারের থেকে সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান চেয়ারম্যান নুরুল আবছার।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় গত এক সপ্তাহ ধরে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি। সীমান্তের লোকজন জানিয়েছেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দূরের এলাকায় আরাকান আর্মির তাড়া খেয়ে এই ২৯ জন পালিয়ে এসেছে।
রাখাইনে সংঘর্ষ, গোলাগুলি শুরু হলে গত মাসের শুরুতে উখিয়া সীমান্তের রহমতের বিল, টেকনাফের হোয়াইক্যং ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের ৩৩০ জন বাংলাদেশে ঢুকে আশ্রয় নেন। তাঁদের মধ্যে ছিল মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী, সেনাবাহিনী, শুল্ক কর্মকর্তা। পরে সবাইকে ১৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে বিজিবি।
গত ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সংঘর্ষ শুরু হয়। এর জের ধরে ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আসে বিজিপির সদস্যসহ ৩৩০ জন। যার মধ্যে ৩০২ জন বিজিপি সদস্য, ৪ জন বিজিপি পরিবারের সদস্য, ২ জন সেনাসদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য ও ৪ জন বেসামরিক নাগরিক।