পঞ্চগড়ে ভারী বর্ষণে ভেঙে গেছে কালভার্টসংলগ্ন সড়ক, যাতায়াত বন্ধ হয়ে চরম দুর্ভোগ

পঞ্চগড়ে ভারী বর্ষণ আর পানির স্রোতে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বলেয়াপাড়া এলাকায় কালভার্ট সংলগ্ন আঞ্চলিক সড়ক ভেঙে গেছে। সোমবার দুপুরে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

পঞ্চগড়ে ভারী বর্ষণ আর পানির তোড়ে একটি কালভার্টসংলগ্ন সড়ক ভেঙে গেছে। গতকাল রোববার ভোরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার সদর ইউনিয়নের বলেয়াপাড়া এলাকায় বলেয়াপাড়া-দেওয়ানহাট-জগদল আঞ্চলিক সড়কে এ ঘটনা ঘটে। এতে চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুই দিন ধরে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন কয়েকটি গ্রামের মানুষ। তাঁদের প্রায় আধা কিলোমিটার কাদাযুক্ত কাঁচা রাস্তায় ঘুরে যেতে হচ্ছে। তবে বিকল্প ওই রাস্তা দিয়ে বড় কোনো যানবাহন যেতে পারছে না।

সড়ক ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে (এলজিইডি) জানিয়েছেন স্থানীয় ভুক্তভোগীরা। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বলেয়াপাড়া হয়ে দেওয়ানহাট-জগদল যাওয়ার এই আঞ্চলিক পাকা সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন শত শত ছোট-বড় যানবাহন চলাচল করে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কটির উত্তরে গোফাপাড়া, বলেয়াপাড়া, মাহানপাড়া, ডুডুমারী, জগদল, সন্ন্যাসীপাড়া, বসুনিয়াপাড়া, দেওয়ানহাটসহ বিভিন্ন এলাকার লোকজন পঞ্চগড় জেলা শহরে আসতে এই সড়ক ব্যবহার করেন। প্রতিবছর বর্ষার সময় বলেয়াপাড়া গ্রামের পশ্চিম দিকে জমে থাকা পানি বলেয়াপাড়া কালভার্টটি দিয়ে নালার সাহায্যে তালমা নদীতে গিয়ে পড়ত। গত শনিবার রাতভর ভারী বৃষ্টিপাতে বলেয়াপাড়া কালভার্টসংলগ্ন সড়কের পশ্চিম দিকে অতিরিক্ত পানি জমা হয়। একপর্যায়ে কালভার্টের ওপর দিয়ে পানি যেতে শুরু করে। পানির চাপে রোববার ভোরে কালভার্ট সংযুক্ত সড়কটি ভেঙে যেতে শুরু করে। ধীরে ধীরে অতিরিক্ত পানির চাপে ভাঙনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এর পর থেকে ওই সড়ক দিয়ে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

আজ সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, কালভার্টের দক্ষিণ পাশের সংযোগ সড়কটি ভেঙে প্রবল স্রোতে পানি যাচ্ছে। ভেঙে যাওয়া সড়কের পশ্চিম পাশে চারটি বাঁশ ফেলে কোনোরকমে একটি সাঁকো তৈরি করেছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। সেই চারটি বাঁশের ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে ভাঙা সড়ক পারাপার হচ্ছেন লোকজন। কেউ কেউ কাঁধে সাইকেল তুলে হেঁটে পার হচ্ছেন এই সাঁকো।

ভেঙে যাওয়া সড়কে চারটি বাঁশ ফেলে কোনোরকমে একটি সাঁকো তৈরি করেছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। সেই চারটি বাঁশের ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে ভাঙা সড়ক পারাপার হচ্ছেন লোকজন। সোমবার দুপুরে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

বলেয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা আবদুল হাকিম (৬০) বলেন, ‘বর্ষার সময় পশ্চিম পাশের জমে থাকা যে পানিটা ভাঙ্গামালী ব্রিজ দিয়ে দক্ষিণ দিকে চলে যেত, সেদিকে এখন বিভিন্ন বাড়িঘর আর দেয়াল নির্মাণ হওয়ায় এই কালভার্ট দিয়ে পানির চাপ বেড়েছে। প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় ছোট কালভার্টটি চাপ নিতে পারেনি। এ জন্য সড়কের ওপর দিয়ে পানি যেতে যেতে চোখের সামনেই সড়কটি ভেঙে গেছে। আমরা খুবই অসুবিধায় পড়ে গেছি। দুই দিন হয়ে যাচ্ছে, এখনো কেউ কোনো উদ্যোগ নেয়নি।’

রবিউল হাসান (৪০) নামের একজন বলেন, এই সড়কটি দিয়ে সব সময় মানুষ চলাচল করে। রোববার একটা অটোভ্যান ভালো রাস্তা মনে করে চালিয়ে যাওয়ার সময় যাত্রীসহ পানিতে পড়ে গেছে। এতে যাত্রী ও ভ্যানচালক সামান্য আহত হয়েছেন। এ সময় স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করেছেন। আরও বৃষ্টি হলে এই ভাঙনের পরিমাণ বাড়তে পারে।

পঞ্চগড় সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আল ইমরান খান বলেন, ‘পানির চাপে সড়ক ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তবে বর্ষার সময় হওয়ায় আপাতত সেখানে একটি কাঠের সাঁকো নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, মঙ্গলবার থেকে এই সাঁকোর নির্মাণকাজ শুরু হবে।’

পঞ্চগড় সদর উপজেলা প্রকৌশলী মো. রমজান আলী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সড়ক ভেঙে যাওয়ার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। আপাতত মানুষ পারাপারে জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে সেখানে একটি কাঠের সাঁকো নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এই অর্থবছরেই সেখানে একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হবে।’