কথা পরিষ্কার, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে: মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমাদের কথা খুব পরিষ্কার, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। পদত্যাগ করে সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। এরপর নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করার মধ্য দিয়ে নতুন নির্বাচন করে দেশে নতুন যাত্রা শুরু করতে হবে।’
আজ রোববার বিকেলে সিলেটে বিভাগীয় ‘তারুণ্যের সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। নগরের চৌহাট্টা এলাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে যৌথভাবে এ সমাবেশের আয়োজন করে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। সমাবেশে বিভাগের চার জেলা ও সিলেট মহানগরের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। বেলা পৌনে তিনটায় সমাবেশ শুরু হয়। বিএনপির মহাসচিব ৫টা ৪৪ মিনিটে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। ৬টা ১০ মিনিট পর্যন্ত তিনি বক্তব্য দেন।
বিএনপির ৪০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘এই সরকারকে বিদায় দেওয়া ছাড়া কোনো পথ নেই। আগামী ১২ তারিখ ঢাকায় একটা সমাবেশ হবে। সেই সমাবেশে নতুন ঘোষণা আসবে। সেই ঘোষণার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নতুন যাত্রা শুরু হবে। সেই যাত্রায় তরুণদের জেগে উঠতে হবে। সমগ্র মানুষকে জাগিয়ে তুলতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘তরুণদের কাছে সব সময়ই মানুষের একটা প্রত্যাশা থাকে। সেটি হচ্ছে মুক্তির প্রত্যাশা, উন্নয়নের প্রত্যাশা, সমাজকে বদলে দেওয়ার প্রত্যাশা। এই তরুণদেরই আজকে সমস্ত মানুষকে জাগিয়ে তুলতে হবে।’
স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানীর সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণসহ স্থানীয় বিএনপির নেতারা বক্তব্য দেন। গত নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি এমন দুজন তরুণী, আন্দোলন-সংগ্রামে পা হারানো যুবদল নেতা, ‘গুম’ হওয়া দুই ছাত্রদল নেতার মা-বোন এবং হামলা-মামলার শিকার কয়েকজন বিএনপি নেতাও সমাবেশে বক্তব্য দেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি আহ্বান জানাচ্ছি, দেশের সব রাজনৈতিক দল, সব মানুষ, সব সংগঠন, তরুণ-যুবক-বৃদ্ধ আপামর জনসাধারণকে। এই দেশকে রক্ষা করতে হলে আসুন আমরা সবাই উঠে দাঁড়াই, মাথা উঁচু করে দাঁড়াই, আমাদের দাবি আমরা আদায় করে নিই এবং এই দানব সরকারকে বাধ্য করি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার জন্য।’ তিনি বলেন, ‘আমরা দুটো নির্বাচন দেখেছি। দুটো নির্বাচনের প্রতিটিতে আওয়ামী লীগ মানুষকে বোকা বানিয়েছে, প্রতারণা করেছে। ২০১৪ সালে আমরা বললাম, কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট দিতে হবে, তাঁরা না মেনে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনব্যবস্থা করলেন। তখনই দেশনেত্রী খালেদা জিয়া বললেন, এই নির্বাচনব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে কখনোই শান্তি আসবে না, স্থিতিশীলতা আসবে না।’
সরকারি চাকরি পেতে হলে ঘুষ দিতে হয় অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশকে আবার আগের জায়গায় নিয়ে আসতে হবে। যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকবে, মানুষের স্বাধীনতা থাকবে, মানুষের সার্বভৌমত্ব থাকবে, কাজ করে আয় করার ব্যবস্থা থাকবে এবং সহজ-সরল জীবন যাপন করতে পারবে। তরুণেরা এখন চাকরি পায় না, অথচ তারা (সরকার) বলেছিল ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। চাকরি তারা দেয় ঠিকই, তবে ১৫ লাখ, ২০ লাখ টাকা ঘুষ দিলে চাকরি দেয়। আর নিজের লোকজনদের চাকরি দেয়।’
বিএনপির কর্মসূচি পালনে সরকার নানাভাবে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, কাল (শনিবার) রাত দেড়টার সময় নাকি এই মাঠ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। রাত দেড়টার সময় আপনারা মাঠ রেডি করেছেন, তারপর এখানে আপনারা সভা করতে সক্ষম হয়েছেন। এভাবেই তারা (সরকার) বাধা দিতে থাকে। এভাবেই তারা আমাদের সব দাবি, আমাদের কথা বলার অধিকার, সেগুলোকে তারা খর্ব করে যাচ্ছে ১৪ বছর ধরে।’ তিনি যোগ করেন, ‘আমরা একটা কঠিন সময়ে এসে উপস্থিত হয়েছি। আজকে জাতি অত্যন্ত সংকটের মধ্যে আছে। এ জাতির স্বাধীনতা টিকবে কি না, এ জাতির অস্তিত্ব থাকবে কি না, আমরা আমাদের স্বকীয়তা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারব কি না, এটা নির্ভর করছে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই। আবার একটা নির্বাচন আসন্ন। এই নির্বাচন ২৩ বা ২৪ সালের মধ্যে হবে। আওয়ামী লীগ বেআইনিভাবে জোর করে ক্ষমতা দখল করে আবার ক্ষমতাকে সম্প্রসারিত করার চেষ্টা করছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শেখ হাসিনা ভিন্ন আঙ্গিকে ভিন্নভাবে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল চাপিয়ে দিতে চেয়েছে আমাদের ওপর। দুইটা নির্বাচন করেছেন এর আগে। আর নির্বাচনটা হচ্ছে কী? ওটা হচ্ছে তাদের (সরকার) একটা অস্ত্র। বেআইনিভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার অস্ত্র। নির্বাচনব্যবস্থাকে তারা তাদের মতো করে ব্যবহার করে। আর তারা বলে, আওয়ামী লীগের আমলেই নাকি সবচেয়ে ভালো নির্বাচন হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। আওয়ামী লীগ সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে জানে না।’ তিনি বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) মনে করে, দেশটা তাদের বাপের জমিদারি। আর আমরা সব প্রজা। এটাই তারা সব সময় মনে করে। সে কারণে তারা সব সময়ই ক্ষমতা ধরে রাখতে চায় বেআইনিভাবে, নির্যাতন করে, হত্যা করে, গুম করে, নিষ্ঠুরতা করে।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘নির্বাচনব্যবস্থা আওয়ামী লীগ ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। তরুণ-যুবকদের যদি অধিকার আদায় করতে হয়, ভবিষ্যতে যদি সুন্দর দেশ তৈরি করতে হয়, যেখানে তারা চাকরি পাবে, শিক্ষার সুযোগ পাবে, স্বাস্থ্যের সুযোগ পাবে, তাহলে তাদের অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে।’ এ সময় দেশের বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতি, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকারের ভূমিকা না রাখাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপির মহাসচিব।