সাভারে ডাকাতদের হামলায় নিরাপত্তারক্ষী নিহত, আহত ২

লাশ
প্রতীকী ছবি

ঢাকার সাভার উপজেলায় একটি বাড়িতে ডাকাতি করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ডাকাত দলের হামলায় এক নিরাপত্তারক্ষী নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন অপর দুই নিরাপত্তারক্ষী। গতকাল শনিবার গভীর রাতে সাভারের আশুলিয়ার কুটুরিয়া এলাকায় আমির দেওয়ানের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় লোকজনের দাবি, পালিয়ে যাওয়ার সময় ডাকাতদের ছোড়া গুলিতে নিরাপত্তারক্ষী নিহত হয়েছেন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ওই ব্যক্তি মারা গেছেন।

নিহত নিরাপত্তারক্ষীর নাম আবদুল কাদের (৫৫)। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বাসিন্দা। আহত দুই নিরাপত্তারক্ষী হলেন আবদুল কুদ্দুস (৫০) ও আবদুর রশিদ (৫৫)।

আমির দেওয়ানের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে আমির দেওয়ানের বাড়ির সামনে ১০ থেকে ১৫ জনের একটি ডাকাত দল আসে। ডাকাতদের মধ্যে কয়েকজন বাড়ির দ্বিতীয় তলার জানালার গ্রিল কেটে ভেতরে ঢোকেন। প্রথমে তাঁরা আমির দেওয়ানের কক্ষে গিয়ে তাঁকে দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে জিম্মি করেন। পরে আমির দেওয়ানকে তাঁর ছেলে অয়ন দেওয়ানকে ডেকে দিতে বলেন। আমির দেওয়ান ছেলের কক্ষের সামনে গিয়ে ডাক দিলে দরজা খুলে অয়ন ডাকাতদের দেখামাত্র দরজা বন্ধ করে চিৎকার দেন। তাঁর চিৎকারে বাড়ির পাশের একটি পোশাক কারখানার তিন নিরাপত্তারক্ষী এগিয়ে আসেন। আশপাশের বাড়ির ভাড়াটিয়ারাও ঘর থেকে বের হয়ে আসেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ডাকাতেরা দ্বিতীয় তলা থেকে একই পথে দ্রুত বের হয়ে নিচে নামেন। পরে তাঁরা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে পালাতে থাকেন।

ডাকাত দলের সদস্যরা পালানোর সময় বাড়ি পাশের ‘নীট ২০০৭ লিমিটেড’ নামের একটি কারখানার তিন নিরাপত্তারক্ষীকে মারধর করেন। খবর পেয়ে আশুলিয়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। নিরাপত্তারক্ষী আবদুল কাদেরকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে সাভারের বেসরকারি এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ রোববার সকালে তিনি মারা যান। অপর নিরাপত্তারক্ষী আবদুল কুদ্দুসের হাত ও পা ভেঙে গেছে। তাঁকে সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) পাঠানো হয়েছে। আরেক নিরাপত্তারক্ষী আবদুর রশিদ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পেয়েছেন। তাঁকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

আমির দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জানালার গ্রিল কেটে তিন ডাকাত আমার ঘরে প্রবেশ করে মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ধরে। পরে তারা আমার ছেলেকে ডেকে দিতে বলে। ছেলের কক্ষের সামনে গিয়ে ছেলেকে ডাক দিলে দরজা খুলে ডাকাতদের দেখতে পেয়ে দ্রুতই দরজা বন্ধ করে সে চিৎকার দেয়। সেই চিৎকারে ডাকাতেরা দ্রুত জানালা দিয়ে পালিয়ে যায়। নিচে যাওয়ার পর ডাকাতদের ছোড়া বেশ কয়েকটি গুলির শব্দ শুনেছি।’

আমির দেওয়ানের ভাতিজা ও নীট ২০০৭ লিমিটেড কারখানার মালিক মো. মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কারখানা ও আমাদের সবার বাসা খুব কাছাকাছি। রাতে নিরাপত্তারক্ষীরা বাসার ঠিক সামনের দিকে কারখানাসংলগ্ন এলাকায় দায়িত্ব পালন করেন। রাতে ডাকাতেরা পালিয়ে যাওয়ার সময় দুই নিরাপত্তারক্ষীকে রড ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক পিটিয়েছে। এ ছাড়া একজনের চোখে গুলি লাগায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন।’

বেসরকারি এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মো. ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকাল ছয়টার দিকে আহত অবস্থায় আবদুল কাদেরকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সাড়ে আটটার দিকে তিনি মারা যান। তাঁর ডান চোখের ওপর ধারালো কিছুর আঘাত ছিল। তবে গুলির কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ এফ এম সায়েদ প্রথম আলোকে বলেন, বাড়িটির আশপাশের বিভিন্ন স্থানের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে তিনজনকে দেখা যাচ্ছে। তবে একজন নিরাপত্তারক্ষী কীভাবে নিহত হলেন, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।