সাভার-আশুলিয়ার অধিকাংশ কারখানা খোলা, বন্ধ আছে ২২টি
ঢাকার সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের বন্ধ হওয়া কারখানাগুলোর বেশির ভাগই উৎপাদনে ফেরার পথে। আজ বৃহস্পতিবার সাভার ও আশুলিয়ায় ২২টি শিল্পকারখানা বন্ধ আছে। এর মধ্যে অধিকাংশ পোশাক কারখানা। বাকি সব শিল্পকারখানা খোলা রয়েছে। সকালে বিভিন্ন শিল্পকারখানার শ্রমিকেরা কারখানায় উপস্থিত হন, কাজ শুরু করেন। তবে কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা বিভিন্ন দাবিতে কাজ বন্ধ রেখে কারখানা মালিকপক্ষের সঙ্গে তাঁদের দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা করেন। এর বাইরে ধামরাইয়ের সব শিল্পকারখানা খোলা রয়েছে।
আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ জানায়, বন্ধ থাকা ২২টি কারখানার মধ্যে সাধারণ ছুটি রয়েছে ছয়টি কারখানা এবং বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬–এর ১৩(১) ধারায় বন্ধ রয়েছে ১৬টি কারখানা। বন্ধ কারখানাগুলোর অধিকাংশ তৈরি পোশাক কারখানা। তবে বন্ধ কারখানাগুলোর মধ্যে ওষুধ, চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুতসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কয়েকটি কারখানায় শ্রমিকেরা উপস্থিত হলেও কাজ বন্ধ রেখে বসে আছেন।
এদিকে দুপুরে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পক্ষ থেকে জানানো হয়, আশুলিয়ায় মোট ২৭২টি কারখানার মধ্যে ১৩(১) ধারায় বন্ধ রয়েছে ১২টি কারখানা। কারখানা খোলা রাখার পর কাজ বন্ধ বা ছুটি রয়েছে আটটি কারখানায়। আশুলিয়ায় আজ চালু কারখানার সংখ্যা ২৫২। আগস্ট মাসের বেতন পরিশোধ করছেন ২৬৯ কারখানা কর্তৃপক্ষ। বেতন পরিশোধ করেনি চারটি কারখানা কর্তৃপক্ষ।
শিল্পাঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন কারখানাসংলগ্ন এলাকায় সেনাবাহিনী, এপিবিএন, পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন বলেন, সাভার ও আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হওয়ায় অধিকাংশ কারখানায় কাজ করছেন শ্রমিকেরা। যেসব কারখানা বন্ধ রয়েছে, সেসব কারখানার মালিকপক্ষের প্রতি অনুরোধ করব, কারখানা খুলে দিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করুন। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান খুঁজতে না পারলে সেটি হবে মালিকপক্ষের ব্যর্থতা।
আশুলিয়ার শিল্প পুলিশ-১–এর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। খোলা কারখানাগুলোয় শ্রমিকেরা শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করছেন।
আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১-এর কর্মকর্তারা বলেন, তাঁদের আওতাধীন সাভার, আশুলিয়া, ধামরাইয়ে তৈরি পোশাক, ওষুধ, চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুতসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্পকারখানা রয়েছে ১ হাজার ৮৬৩টি। এর মধ্যে শ্রমিকদের হাজিরা বোনাস ও টিফিন বিল বাড়ানো, নারীদের সমানুপাতিক হারে পুরুষ শ্রমিক নিয়োগ, আন্দোলনকারী শ্রমিকদের ছাঁটাই না করাসহ বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভে সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে গত মাসের শেষের দিকে অস্থিরতা দেখা দেয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে দাবি আদায়ে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ, কারখানায় হামলার ঘটনা ঘটে। এসব কারণে কারখানা মালিকপক্ষের অনেকে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে অনেক বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়া হয়। গতকাল বুধবার সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে বন্ধ ছিল ২৫টি শিল্পকারখানা। এর মধ্যে সাধারণ ছুটি ছিল পাঁচটি কারখানায় এবং বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬-এর ১৩(১) ধারায় বন্ধ ছিল ২০টি কারখানা।
গতকাল দুপুরে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, আশুলিয়ায় মোট ২৭২টি কারখানার মধ্যে শ্রম আইন-২০০৬-এর ১৩(১) ধারায় বন্ধ ছিল ১৬টি। কারখানা খোলা রাখার পর কাজ বন্ধ বা ছুটি ছিল ১১টিতে। আশুলিয়ায় চালু কারখানার সংখ্যা ছিল ২৪৫। তবে আজ বন্ধ থাকা কয়েকটি কারখানা খুলে দেওয়ায় মোট বন্ধ কারখানার সংখ্যা হয়েছে ২২।