ময়মনসিংহের ধোবাউড়া-পোড়াকান্দুলিয়া সড়ক ধরে সাত মাসের ছেলেকে নিয়ে হাঁটছিলেন গৃহবধূ শিউলি খাতুন। তাঁর চোখে পানি। সকাল থেকে কিছু খাননি। তাঁর সঙ্গে এক মেয়ে ও ভাসুরের মেয়ে। স্বামীর কাঁধে তিনটি বস্তায় গৃহস্থালির জিনিসপত্র। তাঁদের বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন তাঁরা। গতকাল শনিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।
শিউলি খাতুনের স্বামী মুকশেদুল ইসলাম (৩০) পেশায় কৃষক। স্ত্রী ও চার সন্তান নিয়ে তাঁর সংসার। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা সদর ইউনিয়নের গুজিরকান্দি গ্রামে। ধোবাউড়া-পোড়াকান্দুলিয়া সড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট পানিতে তলিয়ে গেছে। সড়কটিতে দাঁড়িয়ে মেঘালয়ের পাহাড় দেখা যায়। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, ভারী বর্ষণ এবং মেঘালয় থেকেই পাহাড়ি ঢল নেমে ধোবাউড়ায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে।
আলাপকালে শিউলি খাতুন বলেন, ‘রাইত একটার দিকে ঘরে পানি আইছে। তিনডা ঘরেই পানি। সহাল থাইক্যা পানি আরও বাড়তাছে। ছোডু পোলাপান না খায়া আছে। বন্যা আইছে না, গরিবের মরণ আইছে।’
মা-বাবার সঙ্গে বস্তায় কিছু জিনিস নিয়ে হাঁটছিল ছয় বছরের মেয়ে জোনাকি। তার চেহারায় ক্লান্তির ছাপ। মুকশেদুল ইসলাম বলেন, তাঁর জীবদ্দশায় এমন পানি দেখেননি। বন্যা হলেও তাঁর বাড়িতে কখনো পানি ওঠেনি, কিন্তু এবারের পানিতে বাড়ি ছাড়তে হলো তাঁদের। এক স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিতে যাচ্ছেন। বস্তায় দরকারি যা জিনিস নেওয়া গেছে, সেগুলো নিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে ধোবাউড়ায় মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। শুক্রবার দিনভর বৃষ্টি চলে। টানা বর্ষণে ধোবাউড়া উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া, গামারীতলা, ঘোষগাঁও ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্টে নেতাই নদের বাঁধ ভেঙে ও পাহাড়ি ঢলে গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ মাইজপাড়া ও ঘোষগাঁও ইউনিয়নের অবস্থা বেশি খারাপ। গতকাল শনিবার বৃষ্টি কিছুটা কম থাকায় আজ রোববার পানি কমার আশা করছিলেন স্থানীয় লোকজন। কিন্তু রাতভর বৃষ্টিতে আজ এলাকাভেদে দুই থেকে চার ফুট পানি বেড়েছে।
ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত শারমিন বলেন, গতকাল পানি কিছুটা কমলেও রাত থেকে টানা বৃষ্টির কারণে মারাত্মক অবস্থা তৈরি হয়েছে।