দখল–চাঁদাবাজি নিয়ে কলাপাড়ায় বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় দখল চাঁদাবাজি নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলেছেন উপজেলা বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতারা। এক সপ্তাহ আগে সংবাদ সম্মেলন করে ইসলামী আন্দোলনের পটুয়াখালী জেলা ও কলাপাড়া উপজেলা শাখার সভাপতি মুফতি হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে সালিস বাণিজ্য ও মানুষের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছিলেন উপজেলা বিএনপি সভাপতি হুমায়ুন সিকদার। ওই ঘটনার পর আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে হুমায়ুন সিকদার ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ করেছেন হাবিবুর রহমান।
আজ বেলা ১১টায় কলাপাড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি নেতার নাম উল্লেখ না করে তিনি ওই অভিযোগ করেন। যদিও মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বিএনপি নেতার নাম উল্লেক করেন। বিএনপি নেতা হুমায়ুন সিকদার ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে মুফতি হাবিবুর রহমান বলেন, ৫ আগস্টের পর কলাপাড়ায় একদলীয় শাসন করার চেষ্টা চলছে। কলাপাড়া মুক্তিযোদ্ধা ভবন দখল করে একটি কার্যালয় করেছে জনৈক এক ব্যক্তি। ওই ভবনের কিছু অংশ ভাড়াও দিয়েছেন তিনি। অথচ তাঁরা কেউই মুক্তিযোদ্ধা নন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে মাছবাজার, স্লুইস গেট, স্কুল–মাদ্রাসা, ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত দখল হয়ে গেছে। প্রতিটি এলাকায় চাঁদাবাজি হচ্ছে। মিথ্যা মামলায় বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীদের জড়ানো হচ্ছে। এভাবে গত কয়েক মাসে ১৪ কোটি টাকার বেশি চাঁদা আদায় করে তহবিল গঠন করা হয়েছে। শুধু উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের ১৩টি স্লুইস থেকে ৭ কোটি ২০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করা হয়েছে। এসব চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে তিনি দলীয় ও আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি করেন। একই সঙ্গে তিনি ও তাঁর দলের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের নিন্দা জানান।
জানতে চাইলে মুফতি হাবিবুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপির সভাপতি কোনো এক জায়গায় চাঁদার জন্য তাঁর দলের কর্মীদের পাঠিয়েছিলেন। সেখানে আমার দলের একজন নেতা ছিলেন। তিনি হাতেনাতে বিষয়টি ধরেছেন। তখন বিএনপির সভাপতি তাঁর কর্মীদের সেখান থেকে ফেরত নিয়ে এসেছেন। এটা কেবল একটা ঘটনা। এ রকম আরও ঘটনার তথ্যপ্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে। আমরা প্রতিটি ঘটনার যথাযথ প্রমাণ দিতে পারব।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন সিকদার। তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর কলাপাড়ার মানুষ শান্তিতে আছে। কোনো ধরনের চাঁদাবাজি, দখল বাণিজ্যের ঘটনা ঘটেনি। ইসলামী আন্দোলনের নেতারা পারলে এসব ঘটনার প্রমাণ দাখিল করুক। যদি প্রমাণ দাখিল করতে পারে তাহলে দলগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এর আগে ৩ অক্টোবর কলাপাড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে মুফতি হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে সালিস বাণিজ্যের অভিযোগ করেন হুমায়ুন সিকদার।
ওই দিন সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে হুমায়ুন সিকদার বলেন, ছাত্র–জনতা ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের দুর্বার আন্দোলনের পর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান। এর সুযোগ নিতে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বাইরে স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে ও সস্তায় দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করার চেষ্টা করছে। ইসলামী আন্দোলনের উপজেলা শাখার সভাপতি মুফতি হাবিবুর রহমান সেই চেষ্টায় লিপ্ত আছেন। তিনি এলাকার বিভিন্ন নিরীহ মানুষকে চেক দিয়ে তাঁদের কাছ থেকে নগদ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা বিচারাধীন।
অভিযোগের বিষয়ে মুফতি হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সালিস শুধু আমি নই, আরও অনেকেই করেন। সালিস নিয়ে আমি বাণিজ্য করি এ বিষয়ে বিএনপিকে প্রমাণ দিতে হবে। ঢালাওভাবে বললে হবে না। আর চেক নিয়ে যেসব কথা বলা হচ্ছে, তা সত্য নয়। তা ছাড়া চেকের বিষয়টি আমার ব্যক্তিগত বিষয়। আমার যদি কোনো দোষ থাকে, তা আইনে সমাধান হবে।’ তিনি চেকের মামলায় বেকসুর খালাস পেয়েছেন বলে দাবি করেন।