বহদ্দারহাটে সংঘর্ষের ক্ষত

পুড়িয়ে দেওয়া হয় পুলিশ বক্স, ভাঙচুর করা হয় ‘বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ’ স্মৃতিস্মারকও।

ভাঙচুর করা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ স্মৃতিস্মারক। গত মঙ্গলবার বেলা ১১টায় নগরের বহদ্দারহাট মোড়েছবি: প্রথম আলো

স্থাপনার চারপাশে আগুনে পোড়া জিনিসপত্র। আঙিনায় থাকা গাছপালাও পুড়ে গেছে আগুনে। স্থাপনার জানালার গ্রিলগুলোও আগুনে পুড়েছে। জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখা গেল, ভেতরে পড়ে আছে ইটপাটকেল। চট্টগ্রাম নগরের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা বহদ্দারহাট মোড়ের পুলিশ বক্সের বর্তমান চিত্র এটি।

১৮ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষের সময় এটিতে আগুন দেওয়া হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও বহদ্দারহাট মোড়ে এখনো সংঘর্ষের চিহ্ন রয়ে গেছে।

এদিন কোটা সংস্কারের দাবিতে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বহদ্দারহাট মোড়ে অবস্থান নেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বেলা দেড়টার দিকে আরাকান সড়কে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পাশ থেকে বহদ্দারহাট মোড়ের দিকে মিছিল নিয়ে আসেন ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা।

মিছিলটি বহদ্দারহাট মোড়ের কাছাকাছি এলে একপর্যায়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় শাহ আমানত সেতু সড়ক প্রান্ত থেকে মিছিলে যোগ দেয় যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগের আরেকটি পক্ষ। দফায় দফায় কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। কয়েক দফা সংঘর্ষের পর সন্ধ্যার দিকে পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। পুলিশ বক্সের ভেতরে প্রাঙ্গণে থাকা চার-পাঁচটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, পুলিশ বক্সের আঙিনায় পোড়া জিনিসপত্রের স্তূপ। প্রবেশের গেটটি বন্ধ। পুলিশ বক্সের সঙ্গে লাগোয়া সামনের দিকের গাছপালাগুলো পুড়ে গেছে। দূর থেকে উঁকি দিয়ে দেখা যায়, ভেতরে বিভিন্ন সামগ্রী এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে। ভেঙে গেছে দুটি জানালা। ছাদের কার্নিশেও আগুনের ছাপ দেখা গেছে।

স্মৃতিস্মারক ভাঙচুর, থানায় হামলা

সংঘর্ষের দিন পুলিশ বক্সের পাশাপাশি বহদ্দারহাট মোড়ে ‘বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ’ স্মৃতিস্মারকও ভাঙচুর করা হয়। পাউবোর গেট ভেঙে ফেলা হয়। পাশাপাশি চান্দগাঁও থানায় হামলা করা হয়। এ সময় হামলাকারীরা থানার সামনে নামফলক ও বাতি ভেঙে ফেলেন। থানার গেট ভাঙার চেষ্টা করেন।

সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, তিন মাস আগে প্রায় সাত কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ’ স্মৃতিস্মারকটি নির্মাণ করা হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, পিরামিড আকৃতির স্থাপনাটির সব কাচ ভাঙা। স্থাপনার ভেতরে পড়ে আছে ইটের টুকরা। আশপাশের ছোট গাছপালার ফাঁকে ইটপাটকেল দেখা গেছে।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, সংঘর্ষের পর মানুষ সড়কে চলাচল শুরু করলে দেখতে পান, এটি ভেঙে ফেলেছেন হামলাকারীরা।

স্থানীয় বাসিন্দা ইকরামুল হোসেন বলেন, বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের পেছনে তাঁর বাসা। বারান্দায় দাঁড়িয়ে ঘটনা দেখার চেষ্টা করছিলেন তিনি। সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে একপর্যায়ে দরজা আটকে ঘরে বসে ছিলেন। রাতে কয়েকজন মিলে সড়কে বের হয়ে দেখেন, পুরো এলাকা বিধ্বস্ত।

এদিন সংঘর্ষে দুজনের মৃত্যু হয়। তাঁরা দুজন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছিলেন বলে জানা গেছে। শুক্রবার রাতে কারফিউ জারির পর থেকে কিছুটা স্বাভাবিক হয় পরিস্থিতি। সংঘর্ষ, থানায় হামলা ও পুলিশ বক্স পোড়ানোর ঘটনায় এখন পর্যন্ত চান্দগাঁও থানায় চারটি মামলা হয়েছে।

চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদ কবির গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বলেন, থানায় হামলা ও পুলিশ বক্স পোড়ানো ও নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে হত্যার ঘটনায় চারটি মামলা হয়েছে।