কক্সবাজারে ভ্রমণের সব তথ্য এখন এক অ্যাপেই
পর্যটক কিংবা ভ্রমণপিপাসুদের তালিকায় শীর্ষে থাকে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। তবে ভ্রমণের আগে অনেকেই কোথায় থাকবেন, কোথায় ঘুরবেন, সৈকতের বাইরে আর কী কী দেখবেন, তা ঠিক করতে পারেন না। আবার কখন কোথায় ভ্রমণ করবেন, কীভাবে যোগাযোগ করবেন এসব তথ্য নিয়েও দুশ্চিন্তায় থাকেন পর্যটকেরা। এসবের এখন সহজ সমাধান রয়েছে। সব তথ্য পাওয়া যাবে একটি মুঠোফোন অ্যাপেই। নাম ‘ভ্রমণিকা’।
কক্সবাজার ভ্রমণে সব তথ্য নিয়ে এ বছরের শুরুর দিন এই মুঠোফোন অ্যাপটি চালু করেছে জেলা প্রশাসন। অ্যাপটি পর্যটকদের জন্য একটি ট্রাভেল গাইড হিসেবে কাজ করবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। অ্যান্ড্রয়েড মুঠোফোন থেকে গুগল প্লেস্টোরে গিয়ে ইংরেজিতে ভ্রমণিকা (vromonika) লিখলেই পাওয়া যাবে অ্যাপটি।
অ্যাপটিতে কক্সবাজারে দর্শনীয় স্থান, ব্যাংক–এটিএম বুথের তথ্য, টিকিট কাউন্টার, হোটেল–রিসোর্টের ঠিকানা, ট্যুরিস্ট বাসের তথ্য, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, কিটকট চেয়ার, লকার সার্ভিসের তথ্য, জরুরি সেবা ও ঘোষণা দেওয়া আছে। এসব প্রতিটির পাশে যোগাযোগের নম্বর ও ঠিকানা দেওয়া রয়েছে। ফলে সহজেই আগে থেকে সব বুক করেই পর্যটকেরা কক্সবাজার ভ্রমণ করতে পারবেন।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, পর্যটকেরা যেন ভ্রমণের সময় হয়রানি কিংবা বিড়ম্বনার শিকার না হন তার জন্য ‘পারসোনাল ট্রাভেল গাইড’ হিসেবে অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছে। পর্যটকদের জন্য প্রয়োজনীয় সব তথ্য রয়েছে সেখানে, যা ব্যবহার করলে সব তথ্য হাতের মুঠোয় পাওয়া যাচ্ছে।
যা আছে অ্যাপটিতে
মুঠোফোনে অ্যাপটি ডাউনলোডের পর ভ্রমণ নির্দেশনা ও সতর্কতা দেখা যাবে। এরপর ১২টি আলাদা বিভাগ দেখা যাবে অ্যাপ স্ক্রিনে। দর্শনীয় স্থানে ক্লিক করলেই ইনানী, হিমছড়ি, লাবণী, কলাতলী, সুগন্ধা, সেন্ট মার্টিন, মহেশখালী, সোনাদিয়া দ্বীপসহ কক্সবাজারের অন্তত ৪৫টি দর্শনীয় স্থানের নাম দেখা যাবে। এর প্রতিটিতে ক্লিক করলেই সেখানে যাওয়ার গুগল ম্যাপ, আবাসন ও খাবারের তথ্য এবং যাওয়ার উপযুক্ত সময় দেখা যাবে।
কক্সবাজার ভ্রমণে বাস, ট্রেন, জাহাজ ও উড়োজাহাজের তথ্যও রয়েছে ভ্রমণিকায়। সেখানে বাসের তথ্যে ক্লিক করলেই অনলাইন বাস টার্মিনালের ওয়েবসাইটে যেতে পারবেন পর্যটকেরা। সেখান থেকে আগাম টিকিটও করা যাবে। এ ছাড়া ভ্রমণিকায় বাস, জাহাজ ও উড়োজাহাজের কাউন্টারে যোগাযোগের তথ্যও রয়েছে। ট্রেনের সময়সূচি ও যাত্রার সময় রয়েছে অ্যাপে। সেখানে ক্লিক করে রেলওয়ের ওয়েবসাইটে আসা যাবে।
কক্সবাজারের সব ধরনের হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট–কটেজ, গেস্টহাউসের তথ্য ভ্রমণিকায় আছে। অ্যাপটিতে ঢুকে কক্সবাজারের ৩৭টি হোটেল ও রিসোর্টের তথ্য পাওয়া গেছে। সেখানে হোটেল-রিসোর্টের ঠিকানা এবং যোগাযোগের নম্বর দেওয়া রয়েছে। তবে দ্রুত সব হোটেল-রিসোর্টের তথ্য হালনাগাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, অ্যাপ ব্যবহার করে চাহিদা অনুযায়ী সহজে হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, কটেজ, গেস্টহাউস খুঁজে নিতে পারবেন পর্যটকেরা। প্রাথমিকভাবে অ্যাপসে সব হোটেল অন্তর্ভুক্ত করা না থাকলেও পর্যায়ক্রমে সব হোটেল-মোটেলের তথ্য যুক্ত করার কাজ চলমান আছে।
সব সেবা এক অ্যাপে
যেকোনো স্থানে ভ্রমণের সময় নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত থাকেন পর্যটকেরা। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে এই চিন্তা কিছুটা বেশি। বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ-লঘুচাপ সৃষ্টি হলে মুহূর্তে সাগর উত্তাল হয়ে পড়ে, ঢেউয়ের উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বেড়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে গোসলে নেমে অনেকে বিপদে পড়েন। স্রোতের টানে ভেসে কিংবা গুপ্ত খালে আটকা পড়ে প্রাণহানি ঘটে। এসব দুর্ঘটনা এড়াতে ভ্রমণিকা অ্যাপে হালনাগাদ করা হয়েছে জরুরি তথ্য।
প্রতিদিনের জোয়ার-ভাটার সময় এবং আবহাওয়ার পূর্ভাবাস জানা যাবে অ্যাপে। পর্যটকদের সচেতনতার জন্য সৈকতের বিপজ্জনক পয়েন্টের তথ্যও অ্যাপে দেওয়া আছে। এ ছাড়া যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট, ট্যুরিস্ট পুলিশ, চিকিৎসক, অ্যাম্বুলেন্স, লাইফগার্ড-বিচ ভলান্টিয়ারদের মুঠোফোন নম্বর দেওয়া আছে অ্যাপে। সেখান থেকে সরাসরি ফোন করার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
সৈকতে ভ্রমণকালে ঘোড়ার পিঠে চড়া, বালুচরে বিচ বাইক রাইড, সমুদ্রের পানিতে দ্রুতগতির জলযান জেটস্কি রাইড, বালুচরের লকার সার্ভিস, সৈকতের ভ্রাম্যমাণ আলোকচিত্রীসহ ভ্রমণসংক্রান্ত যেকোনো সেবা কোথায় কখন পাওয়া যাবে, তার বিস্তারিত তথ্য অ্যাপে দেওয়া আছে। জানা গেছে, কক্সবাজারে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে গত ডিসেম্বর মাসের শেষের ২০ দিনে অন্তত ২৫ লাখ পর্যটক কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ভ্রমণ করেছেন।
কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ভ্রমণে আসা পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য ভ্রমণিকা অ্যাপ খুবই প্রয়োজনীয়। ঘরে বসে পর্যটকেরা কক্সবাজারের সবকিছু জেনে নিতে পারছেন। হোটেল-পরিবহন, জাহাজের অগ্রিম টিকিট বুকিং দিতে পারছেন।