বেড়ায় চর্মরোগে মারা যাচ্ছে গরু, খামারিদের মধ্যে আতঙ্ক
পাবনার বেড়া উপজেলায় গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) বা চর্মরোগের সংক্রমণ ব্যাপক বেড়েছে। গত এক মাসে শতাধিক গরুর মৃত্যুর কথা জানা গেছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, আক্রান্ত প্রায় আড়াই হাজার। অন্য বছরগুলোর তুলনায় এবার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কে খামারিরা।
গতকাল শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার প্রায় সব এলাকাতেই এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা গেলেও যমুনা নদীর চরাঞ্চল ও যমুনাপারের এলাকাগুলোতে এ রোগে আক্রান্ত গরুর সংখ্যা বেশি। এক মাসে শতাধিক গরু মারা গেছে বলে জানিয়েছেন খামারিরা। তবে মৃত্যুর সঠিক হিসাব জানাতে পারেনি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়।
চরাঞ্চলের প্রধান ব্যবসাকেন্দ্র যমুনাপারের নাকালিয়া বাজার। সেখানে অবস্থিত একটি গো খাদ্যের দোকানে কথা হয় চরপেঁচাকোলা গবাদিপশু পালনকারী সমিতির সভাপতি ইব্রাহিম প্রামাণিকের সঙ্গে। তিনি জানান, গত এক মাসে পেঁচাকোলা, চরপেঁচাকোলা ও দক্ষিণ চরপেঁচাকোলা—এই তিন গ্রামেই অর্ধশতাধিক গরু এলএসডি রোগে মারা গেছে। আশপাশের আরও ১০ থেকে ১২টি গ্রাম হিসাবে আনলে এই রোগে গত এক মাসে শতাধিক গরু মারা গেছে।
পরিচয় পেয়ে রোগের প্রতিকার চেয়ে বিভিন্ন গ্রামের অন্তত ১৫ জন গরু পালনকারী সেখানে উপস্থিত হন। তাঁদের সবার বাড়িতে এলএসডি রোগে আক্রান্ত গরু রয়েছে। কয়েকজনের গরু মারাও গেছে।
পেঁচাকোলা গ্রামের আক্কাছ আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর ছয়টি গরুর মধ্যে একটি গরু ও তাঁর ভাইয়ের একটি গরু এলএসডি রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আক্কাছ আলী তাঁর আক্রান্ত গরুটি দেখিয়ে বলেন, ‘সাত দিন ধইরা আমার এই গরুটা চিকিৎসা করাতে যায়া দেড় হাজার টাকার বেশি খরচ হয়া গেছে। জানি না গরুটাকে শেষ পর্যন্ত বাঁচাতে পারব কি না।’ একই চিত্র পেঁচাকোলা গ্রামের মো. আশরাফুল, ইনসাফ হোসেন, দক্ষিণ চরপেঁচাকোলা গ্রামের সংগ্রাম প্রামাণিক, চরপেঁচাকোলা গ্রামের আলী হোসেন, আবদুল হাকিমসহ অনেক খামারির।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এলএসডি রোগটি একধরনের চর্মরোগ হলেও এতে গরুর মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে। এটি ভাইরাসজনিত চরম ছোঁয়াচে রোগ। বর্ষার শেষের দিকে মশা-মাছির বংশবিস্তারের সময় রোগটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। তবে বেড়া উপজেলায় বর্ষা মৌসুমেই এবার এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দিয়েছে। এই রোগ হলে গরুর শরীরের বিভিন্ন জায়গার লোম উঠে যায় এবং ক্ষত সৃষ্টি হয়। ধীরে ধীরে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। গরু ঝিম মেরে থাকে ও কাঁপতে শুরু করে। কিডনির ওপর প্রভাব পড়ার ফলে গরু মারাও যায়। মশা ও মাছির মাধ্যমে এই রোগ দ্রুত ছড়ায়।
নাকালিয়া বাজারের গবাদিপশুর ওষুধ বিক্রেতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিদিনই প্রচুর গরু পালনকারী এলএসডি রোগের ওষুধ নিতে আমার দোকানে এসে ভিড় করছেন। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এই রোগের এমনিতেই বেশ প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। তবে এবারের মতো এত বেশি আক্রান্ত হওয়া আর কখনো দেখিনি।’
বেড়া উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগটির প্রকোপ বেড়াসহ সারা দেশেই দেখা যাচ্ছে। প্রতিষেধকই এ রোগের একমাত্র সমাধান। সরকারিভাবে বিনা মূল্যের প্রতিষেধক কোথাও এখনো আসেনি। তবে দুই-এক মাসের মধ্যেই সরকারি প্রতিষেধক সারা দেশের প্রাণিসম্পদ কার্যালয়গুলোতে দেওয়া হতে পারে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তখন আমরা বিনা মূল্যে এই প্রতিষেধক দিতে পারব।’
মিজানুর রহমান বলেন, ‘বাজারে বিদেশি কোম্পানির প্রতিষেধক পাওয়া যাচ্ছে। তবে দাম (২৩০ টাকা) একটু বেশি হওয়ায় কেউ নিতে চান না। প্রতিষেধক না দেওয়ার ফলে রোগ হলে দেড়-দুই হাজার টাকা খরচ হয়। তবে খামারিদের সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে, আক্রান্ত গরুকে সুস্থ গরু থেকে আলাদা রাখা হলে ও প্রতিষেধক দেওয়া হলে এ রোগের বিস্তার কমানো সম্ভব।’