বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন হবে। যত দিন পর্যন্ত শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ না করবে, তত দিন এই দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। এ জন্য দুর্বার আন্দোলন করতে হবে। আজ শনিবার বিকেলে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম ওরফে নয়ন মিয়ার হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘নয়নকে বিনা কারণে কুমিল্লা বিভাগীয় গণসমাবেশের লিফলেট বিলি করার কারণে হত্যা করা হয়েছে। আজকের সমাবেশে তাঁর (নয়নের) বাবার চোখে যে আগুন দেখতে পেয়েছি, তা সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের চোখেও জ্বলছে।’ তিনি বলেন, ১৫ বছর ধরে এই সরকারের দুঃশাসনে গোটা দেশের মানুষ অতিষ্ঠ। তারা এর থেকে মুক্তি চায়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে এক হতে হবে। এই সরকারের আমলে চাল, ডাল ও তেলের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। আওয়ামী লীগ দুবার ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছে। একবার ২০১৪ সালে, আরেকবার ২০১৮ সালে। ২০১৪ সালে কেউ ভোট দিতে যায়নি। ১৫৪টি আসনে ওরা বিনা ভোটে জয়ী হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গত পরশুদিন তিনি যশোরে সরকারি সব সুবিধা নিয়ে সভা করেছেন। এখন বাংলাদেশের মানুষ আপনার বিদায় দেখতে চায়। দয়া করে মানে মানে ফিরে যান।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘একাত্তর সালে যুদ্ধ করে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। কী পেয়েছি ৫০ বছরে? এখন ৫০ বছর পর ভোটের অধিকারের জন্য জীবন দিতে হচ্ছে। এবার আর আগের মতো নির্বাচন হবে না। যেমন খুশি তেমন চুরি করে ভোট করতে দেওয়া হবে না।’ তিনি বলেন, ২০১৮ সালে গায়েবি মামলা দেওয়া হয় নির্বাচনের আগে। এখন আবার এ ধরনের মামলা দেওয়া শুরু করেছে। ২২ নভেম্বরের পর ১০৪টির মতো গায়েবি মামলা হয়েছে। সরকার ঢাকার মহাসমাবেশ ঘিরে ঘরে ঘরে অভিযান চালাচ্ছে।
২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকে বিএনপির বিরুদ্ধে যে অগ্নিসন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে আসছে আওয়ামী লীগ, তার জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অগ্নিসন্ত্রাস করেছেন আপনারা। ছাত্রলীগের ছেলেদের দিয়ে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে আগুন দেওয়া হয়।’ গুম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘লাকসামের বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম হীরু, হুমায়ুন কবির পারভেজের সন্তানেরা তাদের বাবাকে ৯ বছর ধরে খুঁজছে। বাচ্চাগুলোকে এতিম করেছেন। আওয়ামী লীগের চুরির কথা বলতে গেলে রাত পার হয়ে যাবে।’
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিন উর রশিদের সভাপতিত্বে এই গণসমাবেশ হয়। এতে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, বিএনপির নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা, কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য জাকারিয়া তাহের সুমন ও সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা।
জ্বালানি তেলসহ নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও দলের পাঁচ নেতাকে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি বিভাগীয় পর্যায়ে ধারাবাহিকভাবে এ গণসমাবেশ করছে। এর আগে গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামে প্রথম গণসমাবেশ হয়। পরে ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, ফরিদপুর ও সিলেটে সমাবেশ হয়। আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী ও ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশ হবে।