আ.লীগের ১৭ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী, আলোচনায় আছেন আবদুস সাত্তার

আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থীদের ব্যাপক তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এই আসনে মনোনয়নের দৌড়ে আছেন আওয়ামী লীগের ১৭ জন নেতা–কর্মী। ইতিমধ্যে জাতীয় পার্টির একাংশ প্রার্থী ঘোষণা করলেও আওয়ামী লীগ করেনি। তবে নির্বাচনের আগে ভোটারদের দৃষ্টি আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের কাছ থেকে সরে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার দিকে পড়েছে।

জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগের পর বিএনপির দলীয় পদ থেকেও পদত্যাগ করেছেন আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি পদত্যাগের পর থেকে নানা ধরনের আলোচনা ও গুঞ্জন শুরু হয়েছে।

আওয়ামী লীগের কর্মী–সমর্থক ও ভোটারদের মধ্যে গুঞ্জন চলছে, আবদুস সাত্তার আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন। স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন নেতা–কর্মীও বিষয়টি ঠিক বলে জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে সরাইল উপজেলা বিএনপির শীর্ষস্থানীয় দুই নেতা বলেন, দুই বছর ধরে আবদুস সাত্তার স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখছেন না। এর মধ্যে হঠাৎ দলীয় পদ থেকে তাঁর সরে আসায় তাঁরা ধারণা করছেন, আবদুস সাত্তার আওয়ামী লীগ বা অন্য যেকোনো দল থেকে একই আসনে নির্বাচনে অংশ নেবেন।
বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া। তিনি দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ছিলেন। এর আগে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১১ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন প্রবীণ এই নেতা। নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী আগামী ১ ফেব্রুয়ারি এই শূন্য আসনে উপনির্বাচন হবে।

উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লস্কর বলেন, দলীয় কোনো কর্মসূচিতে অনেক দিন ধরেই আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার উপস্থিতি ছিল না। এখন দল থেকে পদত্যাগ করে যদি স্বতন্ত্র বা অন্য দলের মনোনীত প্রার্থী হন, তাহলে তিনি ভুল করবেন। জনগণ তাঁকে ভোট দেবেন না।

আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার মুঠোফোনে নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তাঁর ছেলে মাঈনুল হাসান ভূঁইয়া ফোনটি ধরেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণে পদত্যাগ করেছেন বাবা। আমার বাবা টানা ২৭ বছর জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। দলের সিদ্ধান্তে সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু গত নির্বাচনের পর থেকে কেন্দ্রীয় ও জেলা বিএনপির কোনো ব্যাপারেই তাঁকে কোনো কিছু জিজ্ঞেস করা হয়নি।’

যদিও আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর এখনো নাম ঘোষণা করেনি। তবে ইতিমধ্যে আশুগঞ্জ ও সরাইল উপজেলা থেকে আওয়ামী লীগের মোট ১৭ জন মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। এদিকে গত মঙ্গলবার জাতীয় পার্টির একাংশের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়াকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। রেজাউলের শ্বশুর জাতীয় পার্টির (রওশন) কেন্দ্রীয় প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা। তিনিও এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে জানা গেছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে নৌকা প্রতীকের কোনো প্রার্থী ছিল না। মহাজোটের প্রার্থী ছিলেন রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি মঈনউদ্দিন মঈন ও জিয়াউল হক মৃধা। তবে মহাজোটের প্রার্থী রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়াও শেষ পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। নির্বাচনের দুই দিন আগে তিনি তাঁর শ্বশুর জিয়াউল হক মৃধার সম্মানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ান।

তবে জাতীয় পার্টির নেতা–কর্মীরা বলেন, জিয়াউল হক মৃধা মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন না। প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে বিএনপির প্রার্থী আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঈনউদ্দিনের মধ্যে। মঈনউদ্দিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের সমর্থন পেয়েছিলেন। এবারের উপনির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী।

জানতে চাইলে মঈনউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত নির্বাচনে বিএনপির নেতা–কর্মীরা যদি কয়েকটি কেন্দ্র দখলে না নিলে দৃশ্যপট অন্যকিছু হতো। ছাত্রজীবন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এখনো দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দলের সঙ্গেই আছি। আশা করি, দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।’

এদিকে জিয়াউল হক মৃধা তাঁর দলের মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। জিয়াউল হক মৃধা বলেন, ‘আমি দলের প্রধান উপদেষ্টা। রওশন এরশাদের সঙ্গে আছি। আমি দলীয় প্রতীকের দাবিদার এবং দলীয় প্রতীক পাব। তাই জনসংযোগ করছি।’