সাতজনের মুখের ভাষা বাঁচাতে যে কৌশল নিয়েছেন সিংরাও
বাংলাদেশে বিলুপ্তপ্রায় ‘রেংমিটচা’ ভাষা জানেন মাত্র সাতজন। তাঁদেরই একজন বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার সিংরাও ম্রো। রেংমিটচা যাতে হারিয়ে না যায়, সে লক্ষ্যে শিশুদের ভাষাটি শেখাচ্ছেন তিনি।
২০১৩ সালে রেংমিটচাভাষীদের আলীকদমে খুঁজে পেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের এক ভাষাগবেষক। তখন ভাষাটি জানা ৩৬ জনকে পাওয়া গিয়েছিল। কমতে কমতে দুই বছর আগে এই ভাষা জানা লোকের সংখ্যা হয় ছয়। রেংমিটচা জানা বাবার কাছ থেকে পরে ভাষাটি শেখেন সিংরাও। এতে এখন রেংমিটচা জানা ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাতে।
আলীকদম উপজেলা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের ক্রাংসিপাড়ার বাসিন্দা সিংরাও। এলাকার শিশুদের গত ডিসেম্বর থেকে রেংমিটচা শেখানো শুরু করেছেন তিনি। সিংরাও ম্রো বলেন, দুই বছর ধরে বাবা মাংপুনের কাছ থেকে রেংমিটচা ভাষা শিখেছেন তিনি। ম্রোদের সঙ্গে মিশে গিয়ে ভাষা হারানো রেংমিটচা জনগোষ্ঠীর অনেক লোক এখনো রয়েছেন। তাঁদের ছেলেমেয়েদের ভাষাটি শেখানো হচ্ছে।
সিংরাও বলেন, ভাষা শেখানোর সময় তাঁর ৭২ বছর বয়সী বাবা মাংপুন উপস্থিত থাকেন। ভুল হলে তিনি শুধরে দেন। পরিবারের দৈনন্দিন কাজ শেষে নিজের মাচাং বাড়িতে শিশুদের পশুপাখি, বনজঙ্গল, চলাফেরা, খাওয়াদাওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে রেংমিটচা ভাষার শব্দ শেখানো হয়। শিশুরা এখন এসব শব্দ বেশ আয়ত্ত করেছে। এসব শিশুর মাধ্যমে পুনরায় রেংমিটচা ভাষার পরিবার গড়ে উঠবে বলে আশাবাদী সিংরাও ম্রো।
শিশুদের রেংমিটচা ভাষা শেখানোয় সিংরাওকে অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন ম্রো ভাষার লেখক ও গবেষক ইয়াংঙান ম্রো। তিনি বলেন, রেংমিটচাভাষী মানুষেরা পৃথক জনগোষ্ঠীর হলেও তাঁরা সময়ের ব্যবধানে ম্রোদের সঙ্গে মিশে মাতৃভাষা হারিয়েছেন। এখন ভাষাটি বিলুপ্তপ্রায়। ভাষাটি সংরক্ষণের জন্য তিনি ‘রেংমিটচ্য’ নামে একটি শব্দ সংকলন বই আকারে বের করেছেন। ওই বই থেকে সিংরাও ম্রো ক্রাংসীপাড়ার শিশুদের রেংমিটচা ভাষা শেখাচ্ছেন।
আলীকদম উপজেলার ক্রাংসীপাড়ায় রেংমিটচা ভাষার শিশুশিক্ষার্থীরা গতকাল মঙ্গলবার তাঁদের পাড়ায় একটি শহীদ মিনার তৈরি করেছে। রাত ১২টা ১ মিনিটে সেখানে ভাষাশহীদদের উদ্দেশ্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। সিংরাও ম্রো বলেন, ‘২৫ কিলোমিটার দূরের উপজেলা সদরে গিয়ে রঙিন কাগজ কিনে ওই কাগজে সাজানো হয়েছে শহীদ মিনারটি। এটি সামনে থাকলে আমরা সাহস পাই। আর স্বপ্নও দেখি, আমাদের ভাষায় কথা বলা লোকের সংখ্যা বাড়ছে। মাতৃভাষাকে রক্ষাই তো একুশের চেতনা।