সড়কের ঝোপজঙ্গল সাফে এক হয়েছেন ৬৫ সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা
সড়কের দুই পাশে অবাধে বেড়ে উঠেছে নানা জাতের ঝোপঝাড়, বুনো গুল্মলতা। আশপাশের বাড়ির বাঁশঝাড়ের বাঁশ, গাছের ডাল ও জঙ্গল এসে ঝুলে পড়ে পায়ে চলার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। অবশিষ্ট অংশে চলাচল করে যানবাহন। এর ফলে ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয় পথচারীদের। পাশাপাশি গাড়ি ছুটলে পথচারীদের আর সরে দাঁড়ানোর জায়গা থাকে না।
এ রকম পরিস্থিতিতে মৌলভীবাজারের চান্দগ্রাম-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কের চান্দগ্রাম-বড়লেখা অংশে পথচারী ও যানবাহনের চালকদের স্বস্তি এনে দিয়েছে একদল স্বেচ্ছাসেবী। সড়কের দুই পাশের ঝোপজঙ্গল পরিষ্কার করেছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। চান্দগ্রাম থেকে বড়লেখা উত্তর চৌমোহনা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটারের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা হয়েছে। সঙ্গে সাতটি যাত্রীছাউনি পরিষ্কার ও রং করা হয়েছে। বড়লেখা উপজেলা সামাজিক সংগঠন অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে এ কাজ করা হয়েছে। এই অ্যাসোসিয়েশনে যুক্ত আছে বড়লেখার ৬৫টি স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন। প্রতিটি সংগঠনের প্রতিনিধিরা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করেছেন।
স্থানীয় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক রাজু আহমদ বলেন, পরিষ্কারের আগে সড়কের দুই পাশ ঝোপঝাড়ে ঘেরা ছিল। সড়ক ছোট হয়ে গিয়েছিল, দুর্ঘটনার ঝুঁকি ছিল। কখনো কখনো দুর্ঘটনাও ঘটেছে। তবে এখন সড়কের দুই পাশ পরিষ্কার হওয়ায় কিছুটা প্রশস্ত হয়েছে। এমন কাজের জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের ধন্যবাদ।
বড়লেখা উপজেলা সামাজিক সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপন্ন ও অসহায় মানুষের জন্য বিচ্ছিন্নভাবে কাজ না করে কীভাবে সমন্বিতভাবে কাজ করা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন স্থানীয় ব্যবসায়ী জাবেদ আহমদ। তিনি বড়লেখার আরেক ব্যবসায়ী আবু হানিফ ও যুক্তরাজ্যপ্রবাসী আবদুল ওয়াদুদ আদনানের সঙ্গে তাঁর ভাবনাটি বিনিময় করেন। এতে উৎসাহ জোগান তাঁরা দুজন। পরে জাবেদ আহমদ কথা বলেন শিক্ষক রিয়াজুল ইসলাম, রেজাউল করিম মিন্টু, প্রভাষক তারেক আহমদসহ কয়েকজনের সঙ্গে। তাঁরাও উৎসাহিত করেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে দেশ-বিদেশে থাকা আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন জাবেদ। একদিন আগ্রহী সবাইকে নিয়ে ভার্চ্যুয়ালি সভা করা হয়। সেই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৫ আগস্ট বড়লেখা পৌরসভা মিলনায়তনে সভা ডাকা হয়। সেখানে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের স্বতঃস্ফূর্ত মতামতের ভিত্তিতে আত্মপ্রকাশ করে বড়লেখা উপজেলা সামাজিক সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন। এর মূল উদ্যোক্তা করা হয়েছে জাবেদ আহমদ, আবু হানিফ ও আবদুল ওয়াদুদ আদনানকে। ৮ জনকে উপদেষ্টা এবং ১১ জনকে সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে সম্প্রতি জাবেদ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি বড়লেখা সদর ইউনিয়নের মাইজপাড়া যুবকল্যাণ সমিতি নামের একটি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। দুর্যোগে ত্রাণতৎপরতা চালাতে গিয়ে তিনি দেখেছেন, প্রায় সব সংগঠন একই স্থানের দিকে ছুটতে থাকে। অন্য ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলোর দিকে আর কারও তেমন দৃষ্টি থাকে না। এর ফলে অনেক মানুষ দরকারি সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হন। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই উপজেলার সব সংগঠনকে এককাতারে নিয়ে আসার জন্য তাঁরা অ্যাসোসিয়েশন তৈরি করেছেন।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা ও সমন্বয়ক কমিটির সদস্যদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা শিক্ষক রেজাউল করিম চান্দগ্রাম-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কের চান্দগ্রাম-বড়লেখা অংশের দুই পাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার এবং আরেক উপদেষ্টা প্রভাষক তারেক আহমদ সড়কের পাশের পরিত্যক্ত যাত্রীছাউনি পরিষ্কার ও রং করার প্রস্তাব দেন। সবাই প্রস্তাব দুটি সমর্থন করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২৮ সেপ্টেম্বর চান্দগ্রাম থেকে সড়কের দুই পাশের ঝোপঝাড় ও যাত্রীছাউনি পরিষ্কার কার্যক্রম শুরু করা হয়। এতে বিভিন্ন সংগঠনের প্রায় ৭০ জন সদস্য অংশ নেন। ৫ অক্টোবর পর্যন্ত সড়কের চান্দগ্রাম থেকে বড়লেখা উত্তর চৌমোহনা পর্যন্ত উভয় পাশের প্রায় ১০ কিলোমিটার পরিষ্কার করা হয়েছে।
অ্যাসোসিয়েশনটির উদ্যোক্তা জাবেদ আহমদ বলেন, বড়লেখা একটি পর্যটন এলাকা। এখানে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, হাকালুকি হাওর ও চা-বাগান আছে। লোকজন ঘুরতে আসেন। এ জন্য সড়কের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা হয়েছে। এ কার্যক্রম চলমান থাকবে।
অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা তারেক আহমদ বলেন, সব সংগঠন থেকে প্রতিনিধি নিয়ে অ্যাসোসিয়েশন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে উপজেলার সব জায়গায় তাঁরা কাজ করবেন।