রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজনের সংঘর্ষের ঘটনায় চোখে আঘাত পেয়েছিলেন মার্কেটিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আলিমুল ইসলাম। চিকিৎসকেরা তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে দুই দফা ভারতে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার পরও বাঁ চোখের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাননি তিনি।
সংঘর্ষে আলিমুলের মতো চোখে আঘাত পেয়েছিলেন ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আল-আমিন ও ফারসি বিভাগের শিক্ষার্থী মিসবাহুল ইসলাম। তাঁদের দুজনকেও সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসক। পরে আল-আমিন ও মিসবাহুল ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন। চিকিৎসার পর আল-আমিন চোখে ঝাপসা দেখছেন আর মিসবাহুল ইসলাম একটি চোখে ২০ শতাংশ দেখতে পাচ্ছেন। এদিকে আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয় বহনের আশ্বাস দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে কথা রাখেনি কর্তৃপক্ষ। এঁদের মধ্যে আল-আমিন ও মিসবাহুল ইসলাম চিকিৎসার খরচের তুলনায় যৎসামান্য সহায়তা পেয়েছেন। আর আলিমুল ইসলাম কোনো আর্থিক সহায়তাই পাননি বলে অভিযোগ করেছেন।
গত বছরের ১১ মার্চ সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে একটি বাসের সুপারভাইজারের বাগ্বিতণ্ডার জেরে স্থানীয় বিনোদপুর বাজারে সংঘর্ষ হয়। পরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজন এ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। হামলা, সংঘর্ষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের শেলে আহত হন দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ওই তিনজনের চোখের ভিট্রিয়ল রেটিনাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় তাঁদের ঢাকায় পাঠানো হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁদের ভারতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। ঘটনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার সব ব্যয় বহনের আশ্বাস দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু সেই কথা রাখেনি প্রশাসন।
আহত শিক্ষার্থী আলিমুল ইসলাম বলেন, ভারতে দুবার চিকিৎসা নেওয়ার পরও বাঁ চোখের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাননি। চিকিৎসায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো আর্থিক সহযোগিতা করেনি। এত বড় একটা ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর রাখতে তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন। তিনিও হয়রানির ভয়ে তাঁদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আল-আমিন চিকিৎসার জন্য তিনবার ভারতে গিয়েছেন। প্রথমবার টাকার অভাবে চিকিৎসা না করিয়েই দেশে ফেরত আসেন। পরে প্রথম আলোতে ‘বসতভিটা বিক্রি করে হলেও ছেলের চোখের চিকিৎসা করাতে চান বাবা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি দেখে ‘সুহানা ও আনিস আহমেদ ফাউন্ডেশন’ আল-আমিনের চোখের অস্ত্রোপচারের খরচ দেয়। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের তহবিল থেকে ৫০ হাজার, নিজ বিভাগ, পরিবার ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহায়তায় চিকিৎসার খরচ বহন করেছেন। চিকিৎসার পর তিনি এখন ঝাপসা দেখছেন। সামনে ঈদুল ফিতরের পর তাঁকে আবার ভারতে যেতে হবে।
সংঘর্ষে আহত মিসবাহুল ইসলামও প্রশাসন থেকে মাত্র ৫০ হাজার টাকা সহায়তা পেয়েছেন; যা চিকিৎসার মোট খরচের তুলনায় খুবই সামান্য। তিনি বলেন, আঘাত পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁকে খুব বেশি সাহায্য করেননি। চিকিৎসা করে আসার পর প্রশাসন থেকে অর্থ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা কথা রাখেননি। ভারতে কয়েক দফা চিকিৎসায় প্রায় ছয় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যবিমা থেকে টাকা দেওয়ার কথা ছিল, সেটিও দেয়নি। তিনি এখনো সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি। আঘাতপ্রাপ্ত চোখে ২০ শতাংশ দেখতে পাচ্ছেন। তবে কোনো লেখা পড়তে পড়ছেন না।
আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসাসহায়তার ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম সাউদ বলেন, ‘ওই ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা যোগাযোগ করেছিল, তাদের সবাইকে সহযোগিতা করা হয়েছে। হয়তো পুরোপুরি সহায়তা করা সম্ভব হয়নি। তবে আমাদের চেষ্টার কমতি ছিল না। আর কেউ যদি যোগাযোগ না করে অভিযোগ করে, সেটা দুঃখজনক।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম আহত শিক্ষার্থীদের ছাত্র উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, প্রশাসন সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করবে। তবে প্রশাসনের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কথাও শিক্ষার্থীদের চিন্তা করতে হবে।