জয়পুরহাটে ‘একটু সুখের বাজারে’ ১০০ টাকায় ব্যাগভর্তি সবজি
এক মাসের অধিক সময় ধরে জয়পুরহাট শহরে ব্যক্তি উদ্যোগে ‘একটু সুখের বাজার’ চালু রয়েছে। সেখানে ভর্তুকি দিয়ে হাট-বাজারে চেয়ে অর্ধেক দামে কাঁচা তরিতরকারি বিক্রি করা হচ্ছে। বিজয়ের মাস ডিসেম্বর উপলক্ষে ‘একটু সুখের বাজারে’ আরও বাড়তি ছাড় দিয়ে প্যাকেজ চালু করা হয়েছে। ১০০ টাকায় মিলেছে ব্যাগভর্তি বাজার। আজ বুধবার বেলা একটায় কেন্দ্রীয় শিবমন্দির মার্কেটে ১০০ টাকায় ব্যাগভর্তি বাজারের এই প্যাকেজ চালু করা হয়।
১০০ টাকায় ব্যাগভর্তি বাজার প্যাকেজ কিনতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ সেখানে ভিড় করেন। তাঁরা ১০০ টাকায় ব্যাগভর্তি নতুন আলুসহ ১০ ধরনের সবজি কিনতে পেরে খুশি। ডিসেম্বর মাসে প্রতি সপ্তাহে দুই দিন এই প্যাকেজ চালু থাকবে বলে জানিয়েছেন ‘একটু সুখের বাজারের’ উদ্যোক্তা।
২৭ অক্টোবর জয়পুরহাট শহরের কেন্দ্রীয় শিবমন্দির প্রাঙ্গণে ‘একটু সুখের বাজার’ চালু করা হয়। সেখানে সাধারণ হাট-বাজারের চেয়ে সব ধরনের কাঁচা শাকসবজি দাম অর্ধেক। বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার হাজারো মানুষ প্রতিদিন এখান থেকে সাশ্রয়ী দামে তাজা তরিতরকারি কিনে স্বস্তি পান।
এই বাজারের উদ্যোক্তা রাজ কুমার খেতান। তিনি জয়পুরহাট শহরের বাসিন্দা। নিজেকে তিনি আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দেন। আজ বুধবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শিবমন্দির মার্কেটের ভেতর একটি গলিতে থরে থরে তরিতরকারি সাজিয়ে রাখা হয়েছে। গলির পেছনে দিকে হাজারো নারী-পুরুষ লাইন ধরে আছেন। গলির প্রথমে উদ্যোক্তা রাজ খেতান রয়েছেন। একে-একে লোকজন গলির ভেতর ঢুকে রাজ খেতানকে ১০০ টাকা দিচ্ছেন। স্বেচ্ছাসেবীরা তাদের আলু, বেগুন, পটোল, মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বরবটি, শিম, ধনিয়া, কাঁচা মরিচ ও পালংশাক ব্যাগে ভরে দিচ্ছেন।
জয়পুরহাট শহরের বাসিন্দা আজিজুর রহমান। তিনি ফেরি করে আলুভাজা বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘সারা দিন ঘুরে ২০০ টাকা রোজগার করি। এই টাকায় চাল কিনলে ঠিকমতো তরিতরকারি কিনতে পারি না। ১০০ টাকায় ব্যাগভর্তি বাজারের কথা শুনে দুপুর সাড়ে ১২টায় এসেছিলাম। ১০০ টাকায় ব্যাগভর্তি তরিতরকারি নিছি। এই বাজারে আমার দুই দিন চলব। কম টাকায় বাজার পেয়ে খুশি লাগছে।’
কাশিয়াবাড়ি গ্রামের লাভলী বেগম বলেন, ‘এক মাস আগে সুখের বাজার চালু হয়েছে। হাট-বাজারে চেয়ে সুখের বাজারে তরিতরকারির দাম অর্ধেক। আমরা নিম্ন আয়ের মানুষেরা অর্ধেক দামে এখান থেকে তরিতরকারির কিনতেছি। এতে সংসারের খাবার খরচে অনেক সাশ্রয় হচ্ছে। আজকে ১০০ টাকায় ব্যাগভর্তি তরিতরকারি কিনছি।’
উদ্যোক্তা রাজ কুমার খেতান বলেন, ‘আমি অক্টোবর মাসে নিজে বাজারে গিয়ে তরিতরকারির দাম শুনে অবাক হয়েছিলাম। তখন আমার মনে হয়েছে সিন্ডিকেট করে তরিতরকারির দাম বাড়ানো হয়েছে। এ কারণে সিন্ডিকেট ভাঙতে নিজেই ভর্তুকি দিয়ে ২৭ অক্টোবর একটু সুখের বাজার চালু করেছি। এটি আগামী রমজান মাস পর্যন্ত চালু রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।’ রাজ কুমার খেতান বলেন, ‘আমি শহীদ পরিবারের সন্তান। ডিসেম্বর মাস বিজয়ের মাস। এই উপলক্ষে ডিসেম্বর মাসের প্রতি সপ্তাহে দুই দিন ১০০ টাকায় ব্যাগভর্তি বাজার প্যাকেজ চালু করেছি। আজকে প্রায় দুই হাজার বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ ১০০ টাকার ব্যাগভর্তি বাজার প্যাকেজ কিনেছেন।’
জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আফরোজা আকতার চৌধুরী বলেন, একটু সুখের বাজার অর্ধেক দামে শাকসবজি পাওয়া যাচ্ছে। এটি একটি ভালো উদ্যোগ। এতে অনেক মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোক্তাকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। বাণিজ্যে মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে এই বাজারের নাম পাঠানো হচ্ছে।