হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ খেলায় অংশ নিয়ে যেন শৈশবে ফিরলেন তাঁরা
পৌষের রোদমাখা দিনে মাঠজুড়ে নানা বয়সী হাজারো নারী-পুরুষের উচ্ছ্বাস। মাঠের ভেতর একের পর এক অনুষ্ঠিত হচ্ছে পাক্ষি, হাডুডু, লাঠিখেলা, রশি টানা, তৈলাক্ত কলাগাছে ওঠা, ডাঙ্গুলিসহ হারিয়ে যাওয়া নানান গ্রামীণ খেলা। ঢোলসহ নানা বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে এসব খেলায় অংশ নেওয়া ব্যক্তি আর দর্শকেরা আনন্দে মেতে ওঠেন।
আজ বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পঞ্চগড় সদর উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদসংলগ্ন হেলিপ্যাড মাঠে এই গ্রামীণ খেলার আয়োজন করা হয়। পঞ্চগড় জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় পঞ্চগড় সদর উপজেলা প্রশাসন এই আয়োজন করে।
গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া এসব খেলায় অংশ নিয়ে বেশির ভাগ প্রবীণ ব্যক্তিই যেন ফিরে যান তাঁদের শৈশবে। এ সময় অনেকে পুরোনো দিনের স্মৃতিচারণা করেন। অপর দিকে, হারিয়ে যাওয়া এসব খেলা নতুন করে দেখতে পেয়ে বেশ অভিভূত হয়েছে শিশু, কিশোর ও তরুণেরা।
বিকেলে লাঠিখেলায় অংশ নিয়ে লাঠি ঘোরানোর সময় সবার নজর কাড়েন ষাটোর্ধ্ব সামসুল হক (৬৫)। তিনি পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের শিংরোড এলাকার বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা বোরহান উদ্দিন সরকার একসময় লাঠি খেলতেন। মাত্র আট বছর বয়সে বাবার কাছেই লাঠিখেলা শিখেছি। এখন তো বাবা আর নেই। এর আগে মাঝেমধ্যে এসব খেলা হতো। কিন্তু প্রায় ১০ বছর ধরে এসব খেলা কোথাও হয় না। আজকে এই খেলায় অংশ নিয়ে খুব ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে, আমি যেন ছোটবেলায় ফিরে গেছি।’
খেলায় অংশ নিতে আসা পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নের সন্ন্যাসীপাড়া এলাকার সমির উদ্দিন (৪৯) বলেন, ‘এখন বয়স হইচে, এইলা (এসব) খেলাধুলা নাই, অনেক দিন তকা (থেকে) খেলাই না। আইজ একটু সুযোগ পানো। আইজ মনডা কহচে (মনে হচ্ছে) আগের দিনলা ফিরে আইচ্চে।’
গ্রামীণ খেলা দেখতে আসা আরিফুজ্জামান (২৬) নামের এক যুবক বলেন, ‘আজকে সারাটা দিন অনেক আনন্দ পেলাম। যে খেলাগুলো এখানে হলো, এর বেশির ভাগেরই নাম শুনেছি, কিন্তু দেখিনি। গ্রামীণ এসব খেলা দেখে খুবই ভালো লাগল। এখন তো আমরা সবাই স্মার্টফোন, ফেসবুক আর ইউটিউবে ডুবে থাকি। আজকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও এখানে যারা এসেছি, তারা স্মার্টফোনের বইরে এসে খেলাধুলা উপভোগ করতে পারলাম।’
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. সাবেত আলী বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশ গড়তে তারুণ্য উৎসবের অংশ হিসেবে হারিয়ে যেতে বসা এসব গ্রামীণ খেলাধুলার আয়োজন করা হয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে মুঠোফোন আসক্তি থেকে ফিরিয়ে আনতে এবং সামাজিক বন্ধন অটুট রাখতে আমাদের এই আয়োজন। এসব খেলা দেখে আমি নিজেও আমার শৈশবে ফিরে গেছি। মানুষের মনে সত্যিকারের আনন্দ জোগাতে এ ধরনের আয়োজন অব্যাহত রাখার চেষ্টা করা হবে।’
বিকেলে পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। দিনব্যাপী ছোট, বড় ও বৃদ্ধরা সাতটি খেলায় অংশ নিয়ে নিজ পারদর্শিতায় হয়েছেন প্রথম ও দ্বিতীয়। জেলা প্রশাসক মো. সাবেত আলী বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।