বরিশালে ৪ দফা দাবিতে ম্যাটস শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন, প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি

বরিশালে চার দফা দাবিতে ম্যাটস শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন। বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরের সদর রোডের অশ্বিনী কুমার হলের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

চার দফা দাবিতে বরিশালে মানববন্ধন ও সমাবশ করেছেন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের (ম্যাটস) শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরের সদর রোডের অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সামনে এই মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

চার দফা দাবি হলো ইন্টার্নশিপ বহালসহ অসংগতিপূর্ণ কোর্স কারিকুলাম সংশোধন, অ্যালাইড হেলথ বোর্ড বাতিল করে অবিলম্বে মেডিকেল এডুকেশন বোর্ড অব বাংলাদেশ নামে স্বতন্ত্র বোর্ড গঠন, কর্মসংস্থান সৃজন এবং দ্রুত নিয়োগ প্রদান ও বঙ্গবন্ধুর প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী উচ্চশিক্ষা প্রদান।

শিক্ষার্থীরা জানান, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে স্বাস্থ্যব্যবস্থা বিনির্মাণ এবং তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে গ্র্যাজুয়েট চিকিৎসকের সংকট নিরসনের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মধ্যম মানের চিকিৎসক তৈরির লক্ষে এ ডিপ্লোমা মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট নামের একটি ক্যাডারের সৃষ্টি করেছিলেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৮ মেয়াদে প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টদের উচ্চশিক্ষা, পদায়ন ও পদোন্নতির কথা উল্লেখ রয়েছে। ১৯৭৮ সাল থেকে এই কোর্সটি বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ নিয়ন্ত্রণ করে আসছে এবং কোর্স শেষে ডিএমএফ ডিগ্রি প্রদান করে রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ।

পরবর্তীতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) এমবিবিএস এবং বিডিএসের মতো পেশাদার নিবন্ধন সনদ প্রদান করে এবং নির্দিষ্ট ৭৩টি ওষুধের একটি তালিকাসহ কর্ম পরিধি ঘোষণা করে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টদের তৃণমুল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। পাশাপাশি সরকারি নিয়োগের মাধ্যমে প্রাইমারি হেলথ কেয়ারের প্রতিষ্ঠানগুলোতে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদে এসব মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টদের নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৫ বেতন স্কেল অনুযায়ী তাঁরা ১১তম গ্রেড বেতন-ভাতাভুক্ত হন। কিন্তু ২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ রাজস্ব খাতে ২৩৬ জন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর গত ১০ বছরে নিয়োগবিধির অজুহাতে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টদের আর কোনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তাঁদের কোর্সের তিন বছর একাডেমিক এবং এক বছর ইন্টার্ন থাকলেও ২০২২-২৩ শিক্ষা বছর থেকে ইন্টার্নশিপ বাতিল করে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তর। ফলে ম্যাটসের হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়ে।

মানববন্ধন চলাকালে সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন তৃণমূল পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে প্রস্তাবিত মেডিকেল অ্যাসিন্ট্যান্ট নামের মধ্যম মানের ডিপ্লোমা চিকিৎসক তৈরি করা হয়। বর্তমানে সরকারি ১১টি ম্যাটস এবং ২০০ বেসরকারি ম্যাটস এ ডিপ্লোমা মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট কোর্সটি পড়ানো হলেও এক যুগ ধরে তাঁদের নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। উচ্চশিক্ষার কথা বঙ্গবন্ধুর প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় থাকলেও আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি।

এ সময় সমাবশে বক্তব্য দেন শিক্ষার্থী মো. আবদুল্লাহ, আশিকুর রহমান, সাবিকুর নাহার, তানজিলা আক্তার, মো. সানি. মো. ইয়ামিন প্রমুখ। পরে মিছিলসহ শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রী বরাবর দাবিসংবলিত স্মারকলিপি প্রদান করেন। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনের মাধ্যমে এই স্মারকলিপি দেন তাঁরা।