চট্টগ্রাম নগরে আধিপত্য বিস্তারের জেরে খুনের ঘটনায় বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠন নগর স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল ও কৃষক দলের তিন নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত নেতারা হলেন নগরের পাঁচলাইশ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সবুজ ও তাঁর ভাই নগর ছাত্রদলের সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম এবং কৃষক দল নগর শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আলম। আজ রোববার তাঁদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নগর বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা ইদ্রিস আলী প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় শৃঙ্খলাপরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
গত শুক্রবার রাতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বায়েজিদ বোস্তামী থানার বার্মা কলোনির মো. সবুজ ও শান্তিনগর কলোনির মো. শাহ আলমের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে শান্তিনগর এলাকায় যুবক মো. ইমন গুরুতর আহত হন। রাতে তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। এদিকে সংঘর্ষের খবর পেয়ে বায়েজীদ বোস্তামী থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পুলিশের গাড়ির ওপর হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দ্রুত বিচার আইনে আরেকটি মামলা করেছে।
জানতে চাইলে বায়েজীদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের গাড়ির ওপর হামলার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। খুনের ঘটনায় জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর মোবারক আলী ও তাঁর অনুসারীরা গা ঢাকা দেন। এই সুযোগে নগরের বায়েজীদ বোস্তামী থানার অপরাধপ্রবণ এলাকা বার্মা কলোনি, শান্তিনগর কলোনিসহ আশপাশের এলাকায় জায়গা দখল এবং মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন স্থানীয় কিছু নেতা-কর্মী। এরই জেরে গত শুক্রবার স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মো. সবুজ ও তাঁর ভাই ছাত্রদল নেতা সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কৃষক দল নেতা শাহ আলমের অনুসারীদের সংঘর্ষ বাধে। সেখানে মারা যান সবুজের অনুসারী মো. ইমন।
কৃষক দল নেতা শাহ আলম নগর বিএনপির সদস্য আর ইউ চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে আর ইউ চৌধুরী নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর অনুসারী। অপর দিকে সাইফুল ও তাঁর ভাই সবুজ নগর ছাত্রদলের সাবেক নেতা আহমদুল আলমের অনুসারী বলে জানান দলের সংশ্লিষ্টরা। আহমদুল আলম নগর বিএনপির সদস্যসচিব নাজিমুর রহমানের অনুসারী। তবে বহিষ্কৃত তিন নেতার কেউ তাঁদের অনুসারী নন বলে দাবি করেন তাঁরা।
পুলিশ জানায়, বহিষ্কৃত ছাত্রদল নেতা সাইফুল এলাকায় সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে চাঁদা না পেয়ে খুলশী থানার কর্ণফুলী কাঁচাবাজারে সামনের রেললাইনে বসা দুই দোকানি আলাউদ্দিন ও রাশেদকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে তাঁর দলের লোকজন। ছাত্রদল নেতা সাইফুলের বিরুদ্ধে ২৩ টি এবং তাঁর ভাই স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সবুজের বিরুদ্ধে ৩০ টি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানায়।
এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও দল থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে জানতে পাঁচলাইশ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সবুজ ও কৃষক দল নগর শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আলমের মুঠোফোনে কল করা হলেও তা বন্ধ থাকায় বক্তব্য জানা যায়নি। তবে সবুজ ও সাইফুলের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বেশ কয়েকটি পোস্ট দেওয়া হয়েছে। এসব পোস্টে উল্লেখ করা হয়, তাঁদের নাম ভাঙিয়ে কেউ অনৈতিক সুবিধা নিলে যেন পুলিশে খবর দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বায়েজীদ বোস্তামী থানার বার্মা কলোনি এলাকার এক বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষমতার পটপরিবর্তনে পুরো দেশের চিত্র পাল্টাতে শুরু করলেও এখানকার চিত্র ভিন্ন। শুধু মানুষ বদল হয়েছে; খুন, হানাহানি, দখল থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না বাসিন্দারা।