সব জিনিসের দাম বেশি, আমাগো বেতন তো বাড়ে নাই
মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটা। মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকার দোকানপাটগুলো ততক্ষণে বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ বাইরে রাখা মালামাল গুছিয়ে দোকানের ভেতরে রাখছেন। বাসস্ট্যান্ড এলাকার পৌর সুপারমার্কেটের তিনটি ফটকের দুটি বন্ধ করেছেন নিরাপত্তাপ্রহরী। প্রধান ফটকের অর্ধেক অংশ খোলা। সেখানে পাশাপাশি দুটি চেয়ারে বসে আলাপ জমিয়েছেন দুই নিরাপত্তাপ্রহরী শামসুল হক (৫৬) ও আদম আলী (৬৫)।
পৌর সুপারমার্কেটে চার শতাধিক দোকান রয়েছে। রাতের পালায় নিরাপত্তার দায়িত্ব পড়েছে এই দুই প্রহরীর। জীবনসংসার নিয়ে আলাপ করছেন তাঁরা। এর মধ্যে শামসুল হকের সঙ্গে কথা হলো। তাঁর বাড়ি জেলা সদরের কয়রা গ্রামে। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে চার সদস্যের সংসার তাঁর। বড় ছেলে মো. ওয়াহিদ (১৮) সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। আর্থিক টানাপোড়েনে ছোট ছেলে শামীম হোসেনের (১৪) পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে। সংসারের ব্যয় মেটাতে না পেরে বছর পাঁচেক আগে বিপণিবিতানে নিরাপত্তাপ্রহরীর কাজ নিয়েছেন শামসুল।
এক টুকরা বসতবাড়ি আর ১২ শতাংশ কৃষিজমি আছে শামসুল হকের। এর আগে অন্যের এক বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চাষ করতেন তিনি। তবে ফসল বিক্রির টাকা দিয়ে সংসার চলত না। পরে কৃষিকাজ ছেড়ে নিরাপত্তাপ্রহরীর কাজ নেন তিনি। মাসিক বেতন আট হাজার টাকা। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আরেক দফা বাড়ায় এ আয় দিয়েও সংসার চলছে না।
শামসুল হক বলেন, ‘সারা রাত জেগে পাহারা দেই। চোর-ডাকাতের ভয় থাকে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহারা দেই। আগে আট হাজার ট্যাকায় টেনেটুনে সংসার চলত। এহন সব জিনিসের দাম বেশি, আমাগো বেতন তো বাড়ে নাই। পরিবার নিয়্যা এহন বড়ই কষ্টে আছি। তিন বেলার জায়গায় দুই বেলা খাইতাছি। বাজারে সব জিনিসের দাম বেশি। তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুর দাম বাইড়া গেছে।’
শামসুল হকের পাশে বসে থাকা আদম আলীরও একই অবস্থা। ছয় সদস্যের সংসার তাঁর। বড় ছেলে দিনমজুরের কাজ করেন। এতে সংসার চলে না, তাই বৃদ্ধ বয়সে রাত জেগে প্রহরীর কাজ নিয়েছেন। তাঁর মতো সুলতান হোসেন (৬৫) ও আমজাদ হোসেন (৫০) নামের আরও দুজন এই পৌর বিপণিবিতানে নিরাপত্তাপ্রহরীর কাজ করেন।
দিন ও রাতের পালায় মিলে নিরাপত্তাপ্রহরীর কাজ করেন মোট চারজন। তবে বেতন-ভাতা নিয়ে আক্ষেপ আছে তাঁদের। নিরাপত্তাপ্রহরীরা বলেন, তিন মাস ধরে তাঁদের বেতন বাড়ানোর আশ্বাস দিয়ে আসছিলেন ব্যবসায়ীরা। তবে এখনো তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। তাঁদের মতো মানিকগঞ্জ শহরে পাঁচ শতাধিক নিরাপত্তাকর্মী রয়েছেন। খাদ্যপণ্যসহ সবকিছুর দাম বাড়ায় নিদারুণ কষ্টের মধ্যে পড়েছেন তাঁরা।
সুলতান হোসেন বলেন, ‘আমাগো মতো গরিবের মাছ পাঙাশের দামও ২০০ ট্যাহা কেজি। এহন তো ওইডাও কিনে খাওয়ার উপায় নাই। কবে যে জিনিসপত্রের দাম কমবো! নাইলে আমাগো মতো খেটে খাওয়া মানুষের পরিবার নিয়্যা চলা খুবই কঠিন।’