কক্সবাজারে পূর্ণিমার জোয়ারে ভেসে এল মৃত একটি ডলফিন ও চারটি মা কাছিম
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের কয়েকটি স্থানে পূর্ণিমার জোয়ারের পানিতে ভেসে এসেছে মৃত একটি ইরাবতী ডলফিন ও অলিভ রিডলে প্রজাতির চারটি মা কাছিম। আজ রোববার সকালে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের হিমছড়ি, দরিয়ানগর ও টেকনাফের হাজমপাড়া সৈকতে প্রাণীগুলো ভেসে আসে।
সব কটির শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। ধারণা করা হচ্ছে, গভীর সাগরে মাছ ধরার ট্রলার ও জালে আটকা পড়ে ডলফিন ও মা কচ্ছপগুলোর মৃত্যু হয়েছে। পরে জোয়ারের পানিতে উপকূলে ভেসে এসেছে। বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃত ডলফিন ও মা কচ্ছপের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন।
জোয়ারের পানিতে ডলফিন ও মা কচ্ছপের মৃতদেহ ভেসে আসার খবরের সত্যতা প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম। ঘটনাস্থল থেকে তিনি বলেন, আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সৈকতের হিমছড়ি এলাকায় ইরাবতী ডলফিনটি ভেসে আসে। ডলফিনের লেজের অংশে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে, তবে শরীরের অন্য কোথাও আঘাতের দাগ নেই। ধারণা করা হচ্ছে, ডলফিনটি মারা গেছে কয়েক দিন আগে। এখন জোয়ারের পানিতে সৈকতে ভেসে আসে। ডলফিনের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মরা ডলফিনটি বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে সৈকতের বালুচরে পুঁতে ফেলা হবে।
মৃত ডলফিনের দৈর্ঘ্য ৬ ফুট ও ওজন ১২০ কেজি জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সমুদ্রসৈকতের ইনানী সোনারপাড়া সৈকতে একটি, পাটুয়ারটেক সৈকতে একটিসহ মোট দুটি মৃত ডলফিন ভেসে এসেছিল। পরের দিন ১৭ ফেব্রুয়ারি হিমছড়ি সৈকতে ভেসে আসে আরও একটি মৃত ডলফিন।
এদিকে আজ সকাল ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের দরিয়ানগর ও টেকনাফের হাজমপাড়া সৈকতে ভেসে আসে অলিভ রিডলে প্রজাতির চারটি মরা মা কাছিম। দুপুরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরা কাছিমগুলো উদ্ধার করেন বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মীরা। এ প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, মরা কাছিমের পেটে ডিম আছে। তবে ডিমগুলো গণনা করার মতো অবস্থায় নেই, পচে ভেঙে গেছে। সম্ভবত কয়েক দিন আগে গভীর সাগরে মাছ ধরার জালে আটকা পড়ে মা কাছিমগুলোর মৃত্যু হয়েছে।
গত শুক্রবার জোয়ারের পানিতে সমুদ্রসৈকতে ভেসে আসে ২৪টি মৃত মা কাছিম। সব কটির পেটে ৬০ থেকে ৮০টি করে ডিম ছিল। গত এক মাসে কক্সবাজার শহর, রামু, উখিয়া, টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন ও মহেশখালীর সোনাদিয়া সৈকত থেকে অন্তত ৮৮টি মৃত মা কাছিম উদ্ধার করা হয়েছে। সব কটির শরীরে আঘাতের চিহ্ন এবং পেটে ডিম ছিল।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা প্রথম আলোকে বলেন, প্রতি বছর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীত মৌসুমের কয়েক মাস কক্সবাজার সৈকতে ডিম পাড়তে আসে শত শত মা কাছিম। হাজার কিলোমিটারের গভীর সমুদ্র পাড়ি দিয়ে মা কাছিমগুলো উপকূলের দিকে আসার সময় মাছ ধরার জালে আটকা পড়ে। তখন জেলেরা কাছিম ছেড়ে না দিয়ে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে সাগরে নিক্ষেপ করে। এ বিষয়ে জেলেদের সচেতন করা হয় না। এখনো প্রতিদিন অন্তত ১০ থেকে ১৫টি করে মরা কাছিম ভেসে আসছে। সৈকতে পড়ে থাকা অবস্থায় বহু কাছিম কুকুর ও গুইসাপ খেয়ে ফেলছে। দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় মানুষ কিছু মরা কাছিম বালুচরে পুঁতে ফেলেন। এ কারণে ভেসে আসা মরা কাছিমের প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয় করা কঠিন।
কক্সবাজার উপকূলে ডলফিন, মা কাছিমসহ অন্যান্য প্রাণীর মৃত্যু ঘটনায় অনুসন্ধান চলছে জানিয়ে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক তৌহিদা রশীদ বলেন, ইতিমধ্যে ফরেনসিক নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। প্রাণীগুলোর আবাসস্থলে কোনো বড় ধরনের সমস্যা হয়েছে কি না, তারও অনুসন্ধান করা হচ্ছে।