চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাঁদা না দেওয়ায় ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নির্মাণকাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ

চট্টগ্রামের বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হল থেকে দুই নম্বর ফটক পর্যন্ত সড়কের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী বিরুদ্ধে। বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাওল হলের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাঁদা না দেওয়ায় নির্মাণকাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে। গত রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর চিঠি দিয়ে এ অভিযোগ করে রেনিসা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চিঠিতে শাখা ছাত্রলীগের কথা লিখলেও নির্দিষ্ট কোনো নেতার নাম উল্লেখ করা হয়নি।

চিঠিতে রেনিসা এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার উল্লেখ করেন, ভর্তি পরীক্ষার আগে জরুরি ভিত্তিতে রাস্তা সংস্কার করার জন্য রেনিসা এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল। কার্যাদেশ দেওয়ার পরের দিনই তিনি সাময়িক একটি রাস্তা নির্মাণ করেন। ভর্তি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ১৬ জুন পুরোদমে কাজ শুরু করেন। কয়েক দিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বাধা দেন। একপর্যায়ে তাঁকে কাজ বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। এ বিষয়টি প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদারকে জানিয়েছিলেন। এরপর ৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলীর নির্দেশে আবার কাজ শুরু করেন। তবে চাঁদা না দেওয়ায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কাজ বন্ধ করে দেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, রেনিসা এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে গত ১১ মে সোহরাওয়ার্দী হল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর ফটক পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার করার কার্যাদেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ রাস্তাটির দৈর্ঘ্য ৯০০ মিটার ও প্রস্থ ৪ দশমিক ৫ মিটার। কার্যাদেশের মূল্য ছিল ৫১ লাখ ৯০ হাজার টাকা।

রেনিসা এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার মোহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দুই দফা চিঠি দিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত সুরাহা করা হয়নি। মালামাল প্রস্তুত থাকার পরও তাঁকে কাজ বন্ধ রাখতে হচ্ছে, নির্মাণশ্রমিকদের বেতন দিতে হচ্ছে। এ কারণে তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, তাঁর কর্মচারীদের মারধর করা হয়েছে। যাঁরা চাঁদা দাবি করেছেন, তাঁরা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি দেখলে চিনবেন; তবে নাম জানেন না।

মোহাম্মদ ইলিয়াসের এ অভিযোগের পর কয়েকজন প্রকৌশলী ও নির্মাণশ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন এ প্রতিবেদক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা বলেন, চাঁদা দাবি করা নেতা-কর্মীদের সবাই নিজেদের আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে নিজেদের পরিচয় দেন। তাঁদের মধ্যে শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাদেক হোসেন ও মোফাজ্জল হায়দার ছিলেন।

জানতে চাইলে মোফাজ্জল হায়দার বলেন, চাঁদা দাবির এ অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট। তিনি কারও কাছে চাঁদা দাবি করেননি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি ঘিরে অনেক ধরনের রাজনীতি হচ্ছে। হয়তো কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁকে ফাঁসাতে চাচ্ছে। আরেক নেতা সাদেক হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার বলেন, তিনি চিঠি পেয়েছেন। ইতিমধ্যে হাটহাজারী থানায় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ফাঁড়িতে এ অভিযোগের বিষয়ে জানানো হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকেও জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে আজ বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদের কার্যালয়ে গেলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, মোফাজ্জল হায়দার ক্যাম্পাসে ‘টাইগার মোফা’ নামে পরিচিত। এর আগেও বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে তাঁর জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। গত ৬ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গুদামঘর থেকে দরপত্র ছাড়া মালামাল নিয়ে যাওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এ ঘটনার বিচার চেয়ে কাজ স্থগিত ও কর্মবিরতি পালন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সমিতির সদস্যরা। সমিতির নেতাদের দাবির মুখে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছিল কর্তৃপক্ষ। সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও এখনো সে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি।

এর আগে ২০১৫ সালের ২ নভেম্বর ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় রামদা শাণ দিতে দেখা যায় মোফাজ্জল হায়দারকে। শাহজালাল হলের তৃতীয় তলার বারান্দায় রামদায় শাণ দেওয়ার ছবি ৩ নভেম্বর প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়। এরপর ৬ নভেম্বর মোফাজ্জলকে সাময়িক বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। বহিষ্কারের পর পরীক্ষা দিতে না পেরে ২০১৬ সালের ৫ এপ্রিল চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরীক্ষার হলে তালা ঝুলিয়ে দেন মোফাজ্জল হায়দার। এ কারণে ওই দিনের পরীক্ষা স্থগিত রাখতে হয়েছিল।