‘নৌকার বাইরে কেউ কথা বললে গলা কীভাবে নামাতে হয়, জানি’
নৌকার বাইরে গিয়ে কেউ কোনো কথা বললে তাঁর গলা নামিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মাদারীপুর-২ (রাজৈর-সদর একাংশ) আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খানের বড় ছেলে আসিবুর রহমান খান। এ-সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়।
২ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে আসিবুর রহমান খানকে বলতে শোনা যায়, ‘নৌকার বাইরে যদি একজনও কোনো রকম কথা বলে, ইভেন গলা উঁচু করে কথা বলার চেষ্টা করে, আমি তাদের বলতে চাই, আপনাদের গলা আমরা কীভাবে নামাব, সেটা আমরা ভালো করেই জানি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল সোমবার রাতে মাদারীপুর সদর উপজেলার খোঁয়াজপুরের টেকেরহাটে নির্বাচনী প্রচারে যান শাজাহান খানের বড় ছেলে আসিবুর রহমান খান। তিনি জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য। এলাকাটি মাদারীপুর-৩ (কালকিনি-সদর একাংশ) আসনের মধ্যে পড়েছে। ওই আসনের নৌকার প্রার্থী আবদুস সোবহান মিয়া ওরফে গোলাপের পক্ষে নৌকায় ভোট চাইতে গিয়ে আসিবুর রহমান খান ওই বক্তব্য দেন।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে আসিবুর রহমান খান বলেন, ‘আমি এবং বর্ষণ জমাদার মামা, আমরা এখানে এসেছিলাম এই টেকেরহাটে, নৌকার পক্ষে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা করতে। আমাদের প্রিয় মুখ আবদুস সোবহান গোলাপ চাচার সপক্ষে কাজ করার জন্য। কিন্তু একদল সন্ত্রাসী চেষ্টা করেছে এখানে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে। তারা তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, মাদক ব্যবসা চালিয়ে এই টেকেরহাটকে কুক্ষিগত করার পাঁয়তারা করছে। তাদের আমি খুবই কঠোরভাবে জানাতে চাই, আমরা এখনো ঠান্ডা আছি, তাই ঠান্ডা থাকতে দেন। যদি একবারও মাথা গরম করি, তাহলে কিন্তু আপনি (স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা) মাদারীপুর কেন, বাংলাদেশেও থাকতে পারবেন না।’
আসিবুর রহমান খান আরও বলেন, ‘আমি আপনাদের জানাতে চাই, হোসেন সরদার চাচা, তিনি আমাদের একজন একনিষ্ঠ কর্মী। নৌকার সপক্ষের একজন কর্মী, তাঁকে ষড়যন্ত্রকারীরা তুলে নিয়ে গিয়েছিল। তাঁকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমি বলতে চাই, এই টেকেরহাটে যদি কোনো রকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে, নৌকার বাইরে যদি একজনও কোনো রকম কথা বলে, ইভেন গলা উঁচু করে কথা বলার চেষ্টা করে, আমি তাদের বলতে চাই, আপনাদের গলা আমরা কীভাবে নামাব, সেটা আমরা ভালো করেই জানি। আপনাদের এখন জাস্ট সাবধান করে গেলাম, সামনে এর থেকে কঠোরভাবে আমরা আসব। আমরা দেখিয়ে দেব, প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার জন্য আমরা মাদারীপুরবাসী, আমরা খোঁয়াজপুরবাসী কী করতে পারি, আমরা শাজাহান খানের সৈনিকেরা কী করতে পারি।’
ছড়িয়ে পড়া বক্তব্যের বিষয়ে জানতে আসিবুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ভোটারদের হুমকি দেওয়ার জন্য বক্তব্য দেননি। তিনি সন্ত্রাসীদের উদ্দেশে বক্তব্য দিয়েছেন। এখন কেউ যদি তাঁকে বিতর্কিত করতে চায়, তাহলে তাঁর কিছুই বলার নেই।
আসিবুর রহমান যখন বক্তব্য দেন, তখন তাঁর পাশে খোঁয়াজপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মোহম্মদ আলী মুনশি উপস্থিত ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আসিবুর ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বর্ষণ জমাদার খোঁয়াজপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি (আসিবুর) নৌকার লোকজনকে মারধর করলে তার প্রতিকার করা হবে বলে বক্তব্য দেন। এখানে তিনি ভোটারদের আতঙ্কিত করতে বা প্রতিপক্ষের প্রার্থীকে হুঁশিয়ারি দিয়ে কোনো বক্তব্য দেননি।
এ বিষয়ে মাদারীপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাহমিনা বেগম বলেন, গোলাপের (নৌকার প্রার্থী) নিজের কোনো জনপ্রিয়তা নেই। সন্ত্রাসী ভাড়া করে ভোটারদের হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে। ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। শাজাহান খানের ছেলের এভাবে প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়া আচরণবিধি লঙ্ঘনের শামিল। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ভোটারদের হুমকি দেওয়া ভিডিওর বিষয়ে জেনেছেন, এখনো ভিডিওটি দেখেননি। প্রকাশ্যে ভোটারদের হুমকি দেওয়া নিয়ে এখনো কোনো প্রার্থী লিখিত অভিযোগ করেননি। এরপরও খোঁজখবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।