কোটাব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রতিবাদে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থার প্রতিবাদে আজ বুধবার বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাছবি: প্রথম আলো

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে এ কর্মসূচি শুরু হয়।

বিক্ষোভ মিছিলটি ইউনিভার্সিটি সেন্টার ভবনের সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় গোলচত্বরে এসে শেষ হয়। এরপর দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে গোলচত্বরে ২০ মিনিট অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। ‘সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’–এর ব্যানারে এই কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এ সময় শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবি জানান।

বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটাপ্রথার কবর দে; গর্জে উঠুক আরেকবার, একাত্তরের হাতিয়ার; কোটা না মেধা? মেধা, মেধা; অ্যাকশন অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন, কোটাপ্রথার বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন; আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই; আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার; কোটাপ্রথা যেখানে, লড়াই হবে সেখানে’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।

অবস্থান কর্মসূচিতে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী আসাদুল্লা আল গালিবের সঞ্চলনায় বক্তব্য দেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সজীব হোসেন ও সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী আজাদ শিকদার।

আরও পড়ুন

ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘১৯৭১ সালে বৈষম্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আমরা যে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি, সে দেশে এই বৈষম্যমূলক কোটা অযৌক্তিক। যেখানে স্বাধীন দেশে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের লাঞ্ছিত করা হয়, সেখানে মহান মুক্তিযুদ্ধের তৃতীয় প্রজন্মকে কোটার সুবিধা দেওয়া বৈষম্যমূলক। আমাদের দাবি, ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহাল করে সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ কোটা বাতিল করা হোক। মেধার ভিত্তিতে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দিতে হবে।’

আজাদ শিকদার বলেন, ‘২০১৮ সালে সারা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা চাকরিতে অন্যায্য ও অযৌক্তিক কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ৪ অক্টোবর ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে কোটা বাতিল করে মেধাভিত্তিক কোটা চালু করা হয়। কিন্তু অত্যন্ত হতাশার বিষয়, চাকরিতে কোটা পুনর্বহাল করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রহসন করা হচ্ছে বলে মনে করি। আমরা শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সারা দেশের শিক্ষার্থীদের চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করছি। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত এই আন্দোলন চলমান থাকবে।’

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেন সিলেটের মুরারিচাঁদ কলেজের (এমসি কলেজ) শিক্ষার্থীরা। ওই কলেজের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী তানজিনা বেগম বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকেই দেশে মেধার কম মূল্যায়ন হয়েছে। এই কোটাব্যবস্থা কোনোভাবেই আমাদের সঙ্গে যায় না। ২০২৪ সালে এসে নারী কোটা, মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করা সময়ের দাবি। শুধু পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য এই কোটা রাখা যেতে পারে।’

গত ৫ জুন মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলসংক্রান্ত পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। এর ফলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নবম থেকে ত্রয়োদশতম গ্রেডে নিয়োগ দেওয়ায় আর কোনো বাধা থাকল না।