কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইতে বাজিতপুর উপজেলার ‘ভোটারদের’ স্থানীয় সংসদ সদস্য তাঁর বাড়িতে দাওয়াত দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ নির্বাচনে বাজিতপুর উপজেলা থেকে একটি সদস্য পদের জন্য প্রার্থী হয়েছেন তিনজন। তাঁরা হলেন শাহজাহান মাহবুবুর রহমান (তালা প্রতীক), আ. রহমান (হাতি প্রতীক) ও মাহাবুব হাসান (নলকূপ প্রতীক)।
শাহজাহান মাহবুবুর রহমান কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসনের সংসদ সদস্য মো. আফজাল হোসেনের সমর্থিত প্রার্থী। তাঁর পক্ষে ভোট চাওয়ার জন্য সংসদ সদস্য আগামীকাল বুধবার নিজের বাড়িতে ভোজের আয়োজন করেছেন বলে অপর দুই প্রার্থী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে গত শনিবার লিখত অভিযোগ দেন।
অভিযোগকারী আ. রহমান বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধিতে সংসদ সদস্যের কারও পক্ষে সরাসরি অবস্থান নেওয়ার সুযোগ নেই। ভোটারদের দাওয়াত করে খাওয়ানোরও সুযোগ নেই। অথচ তিনি তাই করছেন। মাহাবুব হাসান বলেন, ভোটারদের বুঝতে আর বাকি নেই যে, এই নিমন্ত্রণে ভালোবাসা নেই, আছে ভোটের স্বার্থ।
শাহজাহান মাহবুবুর রহমান বাজিতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তিনি এর আগেও জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখনো তিনি সংসদ সদস্যের আনুকূল্য পেয়েছিলেন বলে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীদের দাবি।
আ. রহমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে তিনি কিশোরগঞ্জ জজকোর্ট আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) এবং মাহাবুব হাসান উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
লিখিত অভিযোগে তাঁরা উল্লেখ করেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে বাজিতপুরের সব ভোটারকে আগামীকাল বুধবার সংসদ সদস্য নিজের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজের জন্য দাওয়াত দিয়েছেন। ওই দিন নিজের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইবেন তিনি।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনও (ইভিএম) নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ভোট ইভিএমে হলেও কে কোথায় সিল দিয়েছে, তা জানা যাবে। সুতরাং ‘এদিক–ওদিক’ হলে ধরা পড়তে হবে। ধরা পড়তে না চাইলে সংসদ সদস্যের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে হবে।
এ বিষয়ে কথা বলতে সংসদ সদস্য মো. আফজল হোসেনের মুঠোফোনে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। তবে কথা হয় সংসদ সদস্য সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে পরিচিত শাহজাহান মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘আজ যাঁরা আমার ও সংসদ সদস্যের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, তাঁরা কিন্তু সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিয়ে অঙ্গীকার করেছিলেন যে দল যাঁকে সমর্থন জানাবে, তাঁরাও দলের পক্ষে থাকবেন। কিন্তু সমর্থন হারানোর পর তাঁরা আর অঙ্গীকারে নেই।’ ভোজসভার বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। নিমন্ত্রণও পাননি।
এ নির্বাচনে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন।
লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, সত্যতা যাচাই করতে এরই মধ্যে এ নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা (জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা) আশরাফুল আলমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ১৭ অক্টোবর। বাজিতপুর উপজেলায় মোট ভোটার ১৫৯ জন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ভোটার বলেন, তাঁরা মধ্যহ্নভোজের নিমন্ত্রণ পেয়েছেন। দলের এক নেতা সংসদ সদস্যের পক্ষে নিমন্ত্রণ করেন।
জানতে চাইলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আশরাফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, সংসদ সদস্যের ভোজসভার আয়োজন করার অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।