ফরিদপুরে নিক্সনের বিরুদ্ধে মামলা করা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকে বহিষ্কার
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মো. সাইদুর রহমান সিকদার ওরফে মিঠুকে (৪৭) বহিষ্কার করেছে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল। ১১ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সনসহ ৯৮ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে করা মামলার জেরে তাঁকে বহিষ্কার করা হয় বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। দলের নেতারা বলছেন, ওই মামলায় ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন এমন অনেককে আসামি করায় তাঁকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মো. মোজাম্মেল হোসেন খান ও সদস্যসচিব শাহরিয়ার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সাইদুর রহমানকে বহিষ্কারের কথা জানানো হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ভাঙ্গা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সাইদুর রহমান সিকদারের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে দলীয় পদসহ প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করা হলো।’
সাইদুরের শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মো. মোজাম্মেল হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাইদুর রহমান সিকদার আদালতে নিক্সনসহ ৯৮ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন। এ মামলায় এমন অনেককে আসামি করা হয়েছে, যাঁরা আদৌ এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন। এ মামলা করা থেকে তাঁকে বিরত রাখার জন্য জেলা ও উপজেলা বিএনপির অনেক নেতা তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন। তিনি তা উপেক্ষা করেছেন। এ মামলার জন্য বিভিন্ন মহলের ফোনে আমরা বিব্রত অবস্থায় পড়ছি। ফলে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’
এ মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী জসীম উদ্দিন মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, ১১ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরের দ্রুত বিচার আদালতে মামলাটি করা হয়। আদালত তাৎক্ষণিকভাবে কোনো আদেশ দেননি। পরে ওই আদালতের জুডিশয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বৃহস্পতিবার সকালে মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ৩ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে ভাঙ্গার গোলচত্বর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির আয়োজন করে। এতে নিক্সন ও ফরিদপুরের সদ্য সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহদাত হোসেনসহ অন্য অসামিদের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের ওপর ককটেল, হাতবোমা, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে বাদীসহ অনেক ছাত্র–জনতা ও সাধারণ পথচারী আহত হন। বাদীর অভিযোগ, ভাঙ্গা থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন আল রশিদ ছাত্র–জনতার ওপর ১০০টি গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করেছিলেন।
ভাঙ্গা থানার তৎকালীন ওসি মামুন আল রশিদ বলেন, ‘এটি একটি কাল্পনিক ও মিথ্যা মামলা। হয়রানি করার জন্য এটি করা হয়েছে। পুলিশ একটি গুলি ছুড়লে পুলিশ নিজেই বাদী হয়ে মামলা করত। আসলে গোলচত্বরে এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। মামলাটি শতভাগ মিথ্যা। পিবিআই তদন্ত করলেই আমার বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যাবে।’
বহিষ্কারের ব্যাপারে জানতে চাইলে সাইদুর রহমান সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এর আগে উপজেলা ছাত্রদলের এক নেতা এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় প্রকৃত আসামিদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এ জন্য আমি জেলা ও উপজেলা বিএনপির নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে প্রকৃত আসামিদের নাম উল্লেখ করে এ মামলা করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ মামলা করায় আসামিরা টাকা ছড়িয়ে জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের ভুল বুঝিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ না দেখিয়ে আমাকে বহিষ্কার করেছে।’