রাউজানে বিএনপির দুপক্ষের গোলাগুলি-সংঘর্ষ বন্ধের দাবিতে গ্রামের নারীদের সংবাদ সম্মেলন

চট্টগ্রামের রাউজানে বিএনপির দুপক্ষের হানাহানি, গোলাগুলি বন্ধে গ্রামের কয়েক শ নারী সংবাদ সম্মেলন করেন। শুক্রবার বিকেলে উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের গুহরক্ষিত পাড়া দয়াময়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রামের রাউজানে বিএনপির দুপক্ষের হানাহানি, গোলাগুলি বন্ধে এবার গ্রামের নারীরা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। আজ শুক্রবার বিকেলে উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের গুহরক্ষিত পাড়া দয়াময়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ সংবাদ সম্মেলন করেন গ্রামের কয়েক শ নারী। সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা সংঘাত, সংঘর্ষ, গোলাগুলি, হানাহানি বন্ধের দাবি জানান। এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে এই নারীরা জানান, বর্তমানে নোয়াপাড়ার কয়েকটি গ্রাম পুরুষশূন্য। তাঁরা রাতে গুলির শব্দে নির্ঘুম রাত কাটান। প্রতি রাতে ইউপির সাবেক চেয়ারম্যানের ছেলে মুহাম্মদ কামাল দলবল নিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে গ্রামবাসীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শিরিন বেগম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্যে দেন শাহনাজ আকতার, মিনু আকতার, শাহিন আকতার, সকিনা বেগম প্রমুখ। এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন রীমা আক্তার, ছকিনা বেগম, নুসরাত জাহান, সখি আক্তার, মোহাম্মদ ফরহাদ, শামসুল আলম, মোহাম্মদ আবছার, মোহাম্মদ আজিজসহ অনেকে।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, ১৪ নভেম্বর একদল মুখোশ পরা অস্ত্রধারীর এলোপাতাড়ি গুলিতে নোয়াপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মুহাম্মদ সাগর ও ওই ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মাসুদ পারভেজ গুলিবিদ্ধ হন। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘আমরা শান্তি চাই। বর্তমানে এই এলাকায় এখন সড়ক দিয়ে মানুষ হেঁটে বাড়ি আসতে পারেন না। গাড়িতে এলেও নামিয়ে হামলা করে। নারীদের হেনস্তা করা হচ্ছে। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। এসবের কারণে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। ছেলেমেয়েদের জন্যও দুশ্চিন্তা হয়, কখন কী ঘটে সড়কে, গ্রামে, বাজারে।’

প্রতি রাতে গুলি ছোড়ার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে মুহাম্মদ কামাল প্রথম আলোর কাছে এসব অভিযোগ নাকচ করেছেন। তিনি বলেন, তাঁর বাড়িতে এ পর্যন্ত পাঁচবার হামলা ও গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে।

সংবাদ সম্মেলনে এই নারীরা জানান, বর্তমানে নোয়াপাড়ার কয়েকটি গ্রাম পুরুষশূন্য। তাঁরা রাতে গুলির শব্দে নির্ঘুম রাত কাটান। শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রামের রাউজানের গুহরক্ষিত পাড়া দয়াময়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলা বিএনপির অধিকাংশ নেতা-কর্মী দেড় দশকের বেশি সময় ধরে এলাকায় আসতে পারেননি। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এলাকায় ফিরতে শুরু করেন তাঁরা। তবে এলাকায় ফিরেই হামলা, সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে লিপ্ত হয়েছেন বিএনপির দুটি পক্ষের নেতা-কর্মীরা। গত তিন মাসে উপজেলায় অন্তত ১৮টি সংঘর্ষ, হামলা, গুলির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১৫টিই সংঘটিত হয়েছে উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নে। এসব ঘটনায় গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মী।

রাউজান থানার পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির এসব হানাহানির ঘটনায় ভুক্তভোগীদের অনেকেই মামলা করেননি। গত রোববার পর্যন্ত মামলা হয়েছে ১০টি। সর্বশেষ মামলাটি হয়েছে ১৪ নভেম্বর রাতে নোয়াপাড়ার নিরামিষপাড়া গ্রামে অস্ত্রধারীদের ছোড়া গুলিতে ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায়। ২০-২৫ জন মুখোশধারী অস্ত্র নিয়ে এদিন হামলা চালায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একাদিক নেতা-কর্মী বলেন, উপজেলায় হানাহানিতে লিপ্ত দুটি পক্ষের নেতা-কর্মীরা বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়েই দুটি পক্ষ সংঘাতে জড়াচ্ছে।

যদিও গোলাম আকবর খন্দকার ও গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী দুজনই সংঘর্ষের ঘটনার সঙ্গে তাঁদের সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করেছেন। দুজনেরই দাবি, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দেওয়া দলের প্রতিপক্ষ এসব ঘটনার জন্য দায়ী।