২১ বছর পর ঘরে ফিরবেন ছেলে, অপেক্ষায় মা–বাবা
হারিয়ে যাওয়ার ২১ বছর পর অবশেষে ছেলেকে কাছে পেতে যাচ্ছেন মা–বাবা। তাঁকে ফিরে পেতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন স্বজনেরা। ২০০২ সালে ১৫ বছর বয়সে মা-বাবার বুক শূন্য করে হারিয়ে যান মো. মতিউর রহমান (৩৬)। আগামীকাল শুক্রবার ভারত থেকে তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে তিনি দেশে ফিরবেন। তবে তিনি কখন, কীভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে গিয়েছিলেন, সেই জট এখনো খোলেনি।
মতিউর রহমান ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আখানগর ইউনিয়নের দক্ষিণ দেবীডাঙ্গা গ্রামের সহিদুল ইসলাম ও মর্জিনা বেগম দম্পতির বড় ছেলে। জন্ম ১৯৮৭ সালে। ২০০২ সালে হারিয়ে যাওয়ার পর ঠাকুরগাঁও সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন মতিউরের বাবা সহিদুল ইসলাম। এরপর সারা দেশে খুঁজেও তাঁর সন্ধান পাননি।
এর আগে ২৭ জুন মতিউরের দেশে ফেরার কথা ছিল। মা–বাবা তাঁকে নিতে দিনাজপুরের হিলি ও পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে গিয়েছিলেন। কিন্তু কাগজপত্রের জটিলতায় সেদিন তিনি দেশে ফিরতে পারেননি। এখন নতুন করে শুক্রবার তিনি দেশে ফিরতে পারবেন বলে স্বজনদের জানানো হয়েছে। হারানো সন্তানকে কাছে পেতে অপেক্ষায় আছেন বাবা সহিদুল ইসলাম ও মা মর্জিনা বেগম।
সহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত মাসের ২৭ তারিখে আমার ছেলের দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু কাগজপত্রে ঘাটতি থাকায় আসতে পারেনি। আমরা সারা দিন দুইটা ইমিগ্রেশন ঘুরে বাড়িতে ফিরেছিলাম। এখন নাকি শুক্রবার দেশে ফিরবে। এ জন্য শুক্রবার সকালে আমাদের বাংলাবান্ধা যেতে বলা হয়েছে। এত দিন পর ছেলেকে ফিরে পাওয়ার মধ্যে যেমন আনন্দ কাজ করছে, তেমনি মনের মধ্যে খুঁজে না পাওয়ার বেদনাও কাজ করছে।’
২৭ জুন দেশে ফিরতে না পেরে ভারতের ফুলবাড়ী সীমান্ত থেকে ফিরে গিয়েছিলেন মতিউর। ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকতে তাঁর অনুমতিপত্রের (এক্সিট পারমিট) প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সেটি না থাকায় ওই দিন তিনি ফিরতে পারেননি। ভারতের শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা ও মতিউরের স্বজনেরা প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সালের জুনে ভারতের মহারাষ্ট্রের কারজাত এলাকার রাস্তা থেকে মতিউরকে উদ্ধার করেন ‘শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশনের’ সমাজকর্মীরা। তখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন মতিউর। এরপর তাঁর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশনের চিকিৎসকেরা তাঁকে চিকিৎসা দেন। মতিউরকে সম্ভাব্য সিজোফ্রেনিয়ার রোগী হিসেবে শনাক্ত করা হয়। একসময় জানা যায়, তাঁর বাড়ি বাংলাদেশে। এরপর করোনা মহামারি শুরু হলে মতিউরের পরিবার সন্ধানের বিষয়টি স্থবির হয়ে পড়ে। শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মানুষ, বিশেষ করে যাঁরা রাস্তায় থাকেন, তাঁদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে কাজ করে।
সূত্র জানায়, করোনা মহামারির ভয়াবহতা কমে আসার পর আহমেদাবাদের বেসরকারি সংস্থা ‘স্নেহালয়’ বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত হয়। মতিউরকে তাঁর পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে নোয়াখালীর গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের রাহা নবকুমার ও তাঁর স্ত্রী তন্দ্রা বড়ুয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেন শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশনের নীতিশ শর্মা। তিনি একজন বাঙালি। রাহা নবকুমার ও তন্দ্রা বড়ুয়ার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে একসময় ঠাকুরগাঁওয়ে মতিউরের স্বজনদের খুঁজে পাওয়া যায়।