বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
কুড়িগ্রামে শিক্ষার্থী হত্যায় তিন সাংবাদিকসহ ১০৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা, বাদীকে চেনে না নিহতের পরিবার
কুড়িগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলায় শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান নিহতের ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা, সাংবাদিকসহ ১০৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে। গত বৃহস্পতিবার কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রুহুল আমিন বাদী হয়ে কুড়িগ্রাম সদর থানায় মামলাটি করেন।
বাদী রুহুল আমিন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়নের সেনের খামার গ্রামের বাসিন্দা। তবে তিনি নিহত আশিকুরের পরিবারের কোনো সদস্য বা স্বজন নন। নিহত আশিকুরের পরিবারের সদস্য কেউ তাঁকে চেনেন না।
নিহত আশিকুর কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের সাতভিটা গ্রামের কৃষক চাঁদ মিয়ার ছেলে। উলিপুরের পাঁচপীর ডিগ্রি কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামি হলেন কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবদুল খালেক ফারুক, সাংবাদিক হুমায়ুন কবির (সূর্য) ও ইউসুফ আলমগীর।
গত ৪ আগস্ট আন্দোলনের সময় মিছিলে গিয়ে হামলায় আহত হন আশিকুর রহমান ও তাঁর ছোট ভাই আতিকুর রহমান। মাথায় আঘাত পেয়ে আশিকুর বাড়িতে ফিরে আসেন। অবস্থার অবনতি হলে ১৮ আগস্ট তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়া হলে ১ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান।
আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আশিক ভাই হত্যার ঘটনায় রুহুল আমীন নামের কেউ একজন থানায় মামলা করেছেন। আমরা ওই ব্যক্তিকে চিনি না, তিনি আমাদের আত্মীয়স্বজন কেউ নন। এমনকি মামলা করার আগেও তিনি আমাদের সঙ্গে কোনো কথাবার্তা বলেননি। মামলায় ১০৪ জন এজাহারভুক্ত আসামি এবং অজ্ঞাতনামা ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার দিন আওয়ামী লীগের এত লোকজন ছিলেন না।’
মামলায় তিন সাংবাদিককে আসামি করায় বাদী রুহুল আমিনের সমালোচনা করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় নেতারা। এ সম্পর্কে কুড়িগ্রামের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক কে এম নাজমুস সাকিব শাহী বলেন, ‘আন্দোলনের শুরু থেকে আমরা যাঁরা জড়িত ও নেতৃত্বে ছিলাম তাঁরা সবাইকে চিনি এবং জানি। কিন্তু আশিক ভাইয়ের মৃত্যু নিয়ে মামলার বাদী রুহুল আমিনকে ব্যক্তিগতভাবে আমি চিনি না। মামলার আগে তাঁর নামও শুনিনি। মামলায় তিন সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে। কিন্তু ওই তিনজনই আমাদের আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে আসছিলেন। একজন সাংবাদিকের ছেলেমেয়ে আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। এ রকম হয়রানি, মিথ্যা মামলা সর্বোপরি অরাজকতা আমরা বরদাশত করব না।’
এ বিষয়ে জানার জন্য মামলার বাদী রহুল আমিনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
কুড়িগ্রাম সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল আলম বলেন, আশিকুর হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগে এজাহার নামীয় ১০৪ জনেক আসামি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশ এজাহারভুক্ত ৭ নম্বর আসামি আবদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল শুক্রবার কুড়িগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে তাঁকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।