প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ঘিরে বরিশালে সাদিক আবদুল্লাহর মহড়া, ছিলেন না নতুন মেয়র
আড়াই মাসের বেশি সময় পর বরিশালে ফিরে বড়সড় মহড়া দিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিদায়ী মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিকেলে তাঁর নেতৃত্বে নগরে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। তবে ওই শোভাযাত্রায় নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ও তাঁর অনুসারী নেতা-কর্মীদের দেখা যায়নি।
বিকেল সাড়ে চারটায় নগরের সদর রোডে সোহেল চত্বরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত মঞ্চে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন সাদিক আবদুল্লাহ ও তাঁর সমর্থক জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা। তবে সেখানে খায়ের আবদুল্লাহর অনুসারী নেতারা উপস্থিত ছিলেন না। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে মঞ্চ থেকে সাদিক আবদুল্লাহর বন্দনায় রচিত গান বাজানো হয়। শোভাযাত্রাটি নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
দলীয় সূত্র জানায়, গত ৪ এপ্রিল সাদিক আবদুল্লাহ দলীয় মনোনয়ন নিতে বরিশাল থেকে ঢাকায় যান। কিন্তু এবারের সিটি নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন পাননি। পেয়েছেন তাঁর চাচা খায়ের আবদুল্লাহ। এতে সাদিক আবদুল্লাহ ও তাঁর সমর্থক নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ হন। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায়ও দলীয় প্রার্থীর পাশে তাঁদের দেখা যায়নি। এ ছাড়া সাদিক আবদুল্লাহ এরপর বরিশালে ফেরেননি। এমনকি ১২ জুন ভোট দিতেও বরিশালে যাননি তিনি।
নির্বাচনে খায়ের আবদুল্লাহ বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হলে সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী নেতা-কর্মীরা অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে ৮৮ দিন গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশকে সঙ্গে নিয়ে অনেকটা আকস্মিকভাবে বরিশালে ফেরেন সাদিক আবদুল্লাহ। এ সময় কয়েক শ মোটরসাইকেল নিয়ে শোভাযাত্রা করে তাঁকে বরণ করে নেন সমর্থকেরা।
সূত্র জানায়, দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া, নেতা-কর্মীদের হতাশা দূর করতে সাদিক আবদুল্লাহর পক্ষে বড় জমায়েত করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে বেছে নেওয়া হয়। এ জন্য কয়েক দিন ধরে ভেতরে-ভেতরে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তাঁর পক্ষের নেতা-কর্মীরা। তবে সেই প্রক্রিয়ায় নবনির্বাচিত মেয়র ও তাঁর অনুসারী নেতা-কর্মীদের রাখা হয়নি।
জানতে চাইলে খায়ের আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর আমিন উদ্দীন গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আমার জানামতে, আনুষ্ঠানিকভাবে দল থেকে কিছু করা হয়নি। তিনি (খায়ের) দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দল মনোনীত নির্বাচিত মেয়র। দলের স্থানীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে দাওয়াত পেলে অবশ্যই তিনি যোগ দিতেন। এখন কেন তাঁরা এটা দেননি, সেটা তাঁরাই ভালো বলতে পারবেন।’
এ বিষয়ে সাদিক আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস গতকাল প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা আকস্মিকভাবে বড় কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। তাই এখনো তাঁর (খায়ের) সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়নি। আমরা কথা বলে দেখি, তিনি থাকবেন কি না।’
এর আগে আজ সকাল ১০টায় বরিশালে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাতের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সাদিক আবদুল্লাহ। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর, সাবেক সভাপতি গোলাম আব্বাস চৌধুরী সঙ্গে ছিলেন।
সাদিক আবদুল্লাহ আজ অনুষ্ঠানে কোনো বক্তব্য দেননি। তবে সকালে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মেয়র থাকতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। আমার চাচা মেয়র, মানে আমি মেয়র। আমি আগেও জনগণের সঙ্গে ছিলাম, এখনো থাকব।’
এর আগে গতকাল রাতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা ছিল, আমি যেন ঢাকায় থেকে নির্বাচন পরিচালনা করি। সেই অনুযায়ী আমি আমার নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করে নির্বাচন পরিচালনা করেছি। এর ফলে নৌকা বিজয়ী হয়েছে।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত মেয়র পদে আছি। আমার সৌভাগ্য যে আমি আমার চাচার হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করব। এরপর আমি দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করব।’
চাচার সঙ্গে অভিমান বা বিরোধের বিষয়ে সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমি বা আমার চাচা কি এটা আপনাদের বলেছি? যদি থাকেও তাহলে সেটা পারিবারিক বিষয়, মিডিয়ায় আসবে কেন? যদি এ ধরনের কিছু থাকে, তাহলে আমার বাবা আছেন, আমাদের অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আছেন। কাটতি বাড়িয়ে ব্যবসার জন্য মিডিয়া এসব প্রচার করে।’