‘ছেড়ারে যারা গুলি করে মারল, হেরার বিচার চাই’

মো. কবিরছবি: সংগৃহীত


ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবরে আনন্দ মিছিলে গিয়েছিলেন মো. কবির (২৭)। প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের দাবি, মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছোড়া একটি গুলি কবিরের মাথার বাঁ পাশে এসে লাগে। মুহূর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। পরে কয়েকজন তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান। উন্নত চিকিৎসার জন্য সেখান থেকে তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে গত ৮ আগস্ট সন্ধ্যায় তাঁর মৃত্যু হয়।

মো. কবির গফরগাঁও উপজেলার স্বল্প পুনিয়া গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে। তবে কাজের সুবাদে গাজীপুরের মাওনা এলাকায় বসবাস করতেন। সেখানে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন তিনি। ময়নাতদন্ত শেষে গত ৯ আগস্ট কবিরের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেদিন রাতেই তাঁকে নিজ বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।

কবিরের ছোট বোনের স্বামী মিঠুন হাসান গত ৫ আগস্ট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবি দেখে নিশ্চিত হন তাঁর স্ত্রীর ভাই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। পরে মাওনার বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজা শুরু করেন তিনি। রাত নয়টার দিকে খবর পান, কবির ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

এ বিষয়ে মিঠুন হাসান মুঠোফোনে বলেন, ‘সে রাতে আমরা রোগীর কাছে যেতে পারিনি। রাস্তায় কোনো গাড়ি ছিল না, গন্ডগোল চলছিল। পরদিন সকালে হাসপাতালে গিয়ে তাঁকে জীবিত পাই। তাঁর (কবিরের) মাথার বাঁ দিকে একটি গুলি ঢুকে বের হয়ে যায়। গুলি লাগার পর তিন দিন বেঁচে থাকলেও তিনি কিছুই বলতে পারতেন না, চোখে দেখতেন না।’

মনে মনে ভাবতাম, ছেড়াইনে আমার লাশ কান্দ লইবো। কিন্তু আমি কান্দ কইর‌্যা পোলার লাশ গোরস্তানে নিয়া দাফন করছি। এর চাইতে কষ্টের আর কিচ্ছু নাই।’
কবিরের বাবা আবদুর রহমান

কবিরের মৃত্যুর ঘটনায় মা জমিলা খাতুন বাদী হয়ে গত ৩০ আগস্ট গাজীপুরের শ্রীপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৮৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। জমিলা খাতুন মুঠোফোনে বলেন, ‘এই ছেড়াই আমগো দেহাশোনা করত। এই ছেড়া নিয়েই আশা-ভরসা ছিল। ছেড়ারে যারা গুলি করে মারল, হেরার বিচার চাই।’

তিন বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে কবির ছিলেন চতুর্থ। দুই ভাই বিয়ের পর আলাদা সংসার নিয়ে ব্যস্ত। তাই মা–বাবার একমাত্র ভরসার জায়গা ছিল কবির। তিনিই মা–বাবা ও বোনদের দেখাশোনা করতেন। আফসোস করে কবিরের বাবা আবদুর রহমান বলেন, ‘মনে মনে ভাবতাম, ছেড়াইনে আমার লাশ কান্দ লইবো। কিন্তু আমি কান্দ কইর‌্যা পোলার লাশ গোরস্তানে নিয়া দাফন করছি। এর চাইতে কষ্টের আর কিচ্ছু নাই।’