রাজশাহী সিটি নির্বাচন
নিরুত্তাপ নির্বাচনে সরব নৌকা
নৌকার প্রচারণায় প্রায় ৪০টি মাইক ব্যবহার করা হচ্ছে। জাতীয় পার্টি ও জাকের পার্টির প্রার্থীর প্রচারণায় চারটি করে মাইক মাঠে নামছে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মোট চারজন প্রার্থী। এর মধ্যে গত সোমবার রাতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে নির্বাচনের মাঠে নৌকার প্রার্থীই কেবল সরব। জাতীয় পার্টি ও জাকের পার্টির দুই প্রার্থীর পুরোদমে প্রচারণা শুরু হয়নি।
এই নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, জাতীয় পার্টির সাইফুল ইসলাম ও জাকের পার্টির লতিফ আনোয়ার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর আগেই নৌকার প্রার্থী ৭০টি মতবিনিময় সভা করেছিলেন। সেই সভা অব্যাহত রয়েছে। নৌকার প্রচারণায় প্রায় ৪০টি মাইক ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি ও জাকের পার্টির প্রার্থীর প্রচারণায় চারটি করে মাইক মাঠে নামছে। নৌকার পোস্টারে শহরে ছেয়ে গেছে আর জাকের পার্টির প্রার্থীর পোস্টার ছাপানো শুরু হয়েছে গতকাল বুধবার। জাতীয় পার্টির পোস্টার থাকলেও চোখে পড়ার মতো নয়। জাতীয় পার্টির ছয়টি ও জাকের পার্টির একটি নির্বাচনী ক্যাম্প রয়েছে। এর বিপরীতে নৌকার নির্বাচনী ক্যাম্প রয়েছে ৩০টির বেশি।
গতকাল সকালের দিকে নৌকার প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান বাড়ি বাড়ি গিয়ে গণসংযোগ করেন। বিকেলে সাড়ে পাঁচটায় নগরের কাদিরগঞ্জ দড়িখরবোনা ঈদগাহ মাঠে পথসভায় বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ৭০ শতাংশ নির্বাচনী সভা শেষ করেছেন। সব জায়গায় তিনি নারীদের সরব উপস্থিতি দেখতে পেয়েছেন। এতেই প্রমাণিত হয়, নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটাই চেয়েছিলেন, নারীরা যেন বাড়ির বাইরে এসে উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ করেন। তা-ই হয়েছে। তিনি তাঁদের ২১ জুন সকাল সকাল ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘দেরি হলে রোদে অনেকের সমস্যা হতে পারে। মাথা উঁচু করে নিজের সিদ্ধান্তে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। কেউ বাধা দিতে পারবেন না।’
হাতপাখার ভোট বর্জনের প্রসঙ্গে সদ্য সাবেক এই মেয়র বলেন, ‘আমাদের একটা আফসোস থেকে গেল। হাতপাখার প্রার্থী নির্বাচনে থাকলে তাঁদের ভোটের ওজনটা কত, সেটা দেখানো যেত। তবে তাঁদের প্রতীক থাকবে। তাঁদের যাঁরা অন্ধ ভক্ত, তাঁরা সেই প্রতীকে হয়তো ভোট দেবেন। এতে তাঁরা আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলে বলতে পারেন, বর্জন করার পরও কী পরিমাণ ভোট তাঁরা পেয়েছেন। এতে আমাদের কিছু আসে যায় না।’
উপস্থিত ভোটারদের উদ্দেশে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান বলেন, নির্বাচিত হলে রাজশাহী নগরকে আরও চার গুণ বড় করবেন। ১০টি ট্রেনিং সেন্টার খুলবেন। সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে নগরের ছেলেমেয়েরা ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে মাসে লাখ টাকা পর্যন্তু আয় করতে পারবেন। তিনি রাজশাহী-কলকাতার মধ্যে সরাসরি বাস ও ট্রেন চলাচল ও পদ্মা নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নৌপথ তৈরি করে সস্তায় মালপত্র পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টির আশ্বাস দেন।
এ সভায় সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল। খায়রুজ্জামান লিটন এরপর নগরের রেলগেট, শালবাগান, উপশহর নিউমার্কেট, উত্তরা ক্লিনিকের মোড় হয়ে ডাবতলায় গিয়ে পথসভা করেন।
খায়রুজ্জামান লিটনের প্রচারণা কমিটির আহ্বায়ক রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক বলেন, ১৯ জুন পর্যন্ত তাঁদের নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা এভাবেই চলতে থাকবে। শেষ সময়ে আগে তাঁরা থামবেন না।
রাজশাহীতে জাতীয় পার্টির প্রচারণা মিছিল থেকে নৌকার স্লোগান দেওয়া এবং গত ১০ জুন ইশতেহার ঘোষণার নিজেদের মধ্যে হট্টগোল হয়। ওই সময় মনের দুঃখে প্রার্থী সাইফুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘আমার কোনো দল নেই।’ এই অবস্থার মধ্যে জাতীয় নির্বাচনী কার্যক্রম একেবারে ঝিমিয়ে পড়ে। গতকাল সকালে নগরের গণকপাড়া এলাকায় নির্বাচনী গণসংযোগ করার সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘যদি সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকে, তাহলে আমরাও ভোট বর্জন করতে বাধ্য হব।’ বিকেল সাড়ে পাঁচটায় নগরের কাশিয়াডাঙ্গা এলাকায় তিনি গণসংযোগ করেন। তিনি বলেন, কোনো পথসভা নয়, মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন।
গতকাল বিকেলে জাকের পার্টির প্রার্থী লতিফ আনোয়ার নগরের রানীবাজার এলাকা থেকে রাস্তার ধারের দোকানপাটে গণসংযোগ শুরু করেন। তিনি দোকানে দোকানে গিয়ে লিফলেট দেখিয়ে বলছেন, ‘এই যে জাকের পার্টির প্রার্থী এটা আমি। আমার জন্য দোয়া করবেন।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা কখনোই পেশিশক্তির রাজনীতি করি না। কালোটাকার রাজনীতি করি না। গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত আমাদের কোনো নেতার নামে মামলা নেই। আমরা ধর্মসংস্কার থেকে শুরু করে মানবতায় বিশ্বাসী। এ জন্য আমাদের মানুষ ভোট দেবেন।’