ফুলের আদরে জড়ানো জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাস

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে শোভা ছড়াচ্ছে বর্ণিল সব ফুল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হলের সামনেছবি: প্রথম আলো

রোদের উত্তাপে বাইরে বের হওয়া কঠিন। এর মধ্যেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সেজেছে প্রকৃতির নানা রঙে। গত দুই দিনের কয়েক দফা বৃষ্টিতে এখানকার প্রকৃতি যেন আরও সতেজ ও বর্ণিল হয়ে উঠেছে। কৃষ্ণচূড়া, জারুল, সোনালু, কনকচূড়া, বাগানবিলাস, জবা ও কাঠগোলাপের মায়ায় সেজেছে ৭০০ একরের এ ক্যাম্পাস।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পাশে সারি সারি কৃষ্ণচূড়াগাছ। হঠাৎ দেখে মনে হতে পারে আকাশে আগুন লেগেছে! একটু সামনে হেঁটে আসতেই রাস্তার দুই পাশে দেখা যাবে রক্তবর্ণ ফুল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার এলাকা, মুন্নী সরণি, চৌরঙ্গী, বেগম খালেদা জিয়া হলের সামনের সড়কসহ কোথায় নেই এই কৃষ্ণচূড়া!

‘এত এত ফুল দেখে মনে হয় লাল কৃষ্ণচূড়া দখল করে নিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাস! চিরচেনা নৈসর্গিক সৌন্দর্যের ক্যাম্পাসে সবুজের মাঝেমধ্যে কৃষ্ণচূড়ার লাল আভা দেখে মনে হয় যেন আগুন জ্বলছে। ছুটিতে বাসায় বসে ভাবছিলাম ক্যাম্পাসের ফুলগুলো ফুটেছে কি না। ক্যাম্পাসে ফিরে মনে হচ্ছে আমার জন্যই ফুটে আছে সব ফুল।’ বলছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফারহানা রিথী।
কৃষ্ণচূড়াকে সাধারণত আমরা লাল রঙেই দেখতে অভ্যস্ত। তবে উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া তিনটি রঙের হয়—লাল, হলুদ ও সাদা। কম হলেও চোখে পড়ে হলদে রঙের কৃষ্ণচূড়া আর সাদা রঙের কৃষ্ণচূড়ার দেখা মেলে কালেভদ্রে। কৃষ্ণচূড়াগাছ অনেকটা জায়গাজুড়ে শাখাপ্রশাখার বিস্তার ঘটায়।

তবে উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া তিনটি রঙের হয়—লাল, হলুদ ও সাদা
ছবি: প্রথম আলো

কনকচূড়ার রূপে মুগ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহসান লাবিব বলছিলেন, ‘ভোরের সূর্যের আলো যখন আছড়ে পড়ে কনকচূড়ার ওপর, তখন মনে হয় হলুদ শাড়ি পরে কেউ রৌদ্রস্নান করছে। অলংকারের মতো ঝুলতে থাকা এই ফুলের আছে দীর্ঘ মঞ্জরি। প্রকৃতিকে সাজিয়ে তুলতে কনকচূড়া ফুলের জুড়ি নেই।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনের পুকুরে যখন এই হলুদ ফুলের প্রতিবিম্ব দেখা যায়, তখন মনে হয় পানির মধ্যে হলুদের মেলা বসেছে। ঠিক তার ডান দিকে তাকাতেই শহীদ মিনার চোখে পড়বে, যার চারপাশ ঘিরে আছে এই হলদে রাজকন্যা।

নতুন কলাভবনের পাশের মুরাদ চত্বরে বসে চায়ের কাপে চুমুক দেওয়ার সময় টুপটাপ দু-একটি কনকচূড়া মাথার ওপরও পড়তে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবন থেকে আ ফ ম কামালউদ্দিন হল পর্যন্ত সারি সারি এই ফুল জায়গা দখল করে আছে।

গ্রীষ্মে কচি পাতায় ভরা গাছের ডালের আগায় বেগুনি রঙের জারুল ফুল বেশ নজর কাড়ে
ছবি: প্রথম আলো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অর্ধশতাধিক জারুলগাছ আছে। গ্রীষ্মে কচি পাতায় ভরা গাছের ডালের আগায় বেগুনি রঙের জারুল ফুল বেশ নজর কাড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলের পুকুরপাড়ে সারি সারি জারুলগাছ দেখতে পাওয়া যায়। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইজারল্যান্ড এলাকায় লেকের ধারের গাছগুলোয় বেগুনি রঙের ফুল যখন বাতাসে দোল খায়, তখন দেখেও শান্তি লাগে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সামনে ফুটে আছে ক্যাশিয়া জাভানিকা
ছবি: প্রথম আলো

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ঢোকার পর সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে সাদা ও গোলাপি রঙের মিশ্রণের এক ফুলগাছের মাথায় যেন ছেয়ে আছে বলে মনে হয়। সমাজবিজ্ঞান থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের এ ফুলের ফাঁকে ফাঁকে কিঞ্চিৎ আকাশ দেখা যায়। এ ছাড়া কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ভবন ও শহীদ সালাম-বরকত হলের পাশে সারি করে ২০টি নতুন গাছ লাগানো হয়েছে। এসব গাছে গোলাপি রঙের এই ফুল দর্শনার্থীরা মুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে ও চৌরঙ্গী মোড়ে দুই প্রজাতির এ ফুলের নাম ক্যাশিয়া রেনিজেরা ও ক্যাশিয়া জাভানিকা।

সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাত জাহান মীম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ক্যাম্পাসে আসার আগে কখনো এই ফুল দেখিনি। এবার ঈদের ছুটি শেষে ক্যাম্পাসে এসে দেখলাম, ফুলের পসরার সাজিয়ে আমাদের অপেক্ষায় ছিল ক্যাম্পাস।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে থাকা কাঠগোলাপ সাদার মায়া ছড়ায়
ছবি: প্রথম আলো

এসব ফুল ছাড়াও ক্যাম্পাসে ঘুরতে ঘুরতে চোখে পড়বে লাল জবা, সোনালু, বাগানবিলাস ও কাঠগোলাপ। কাঠগোলাপ ফুলের গাছ বিভিন্ন হলসহ ক্যাম্পাসের বেশির ভাগ সড়কের ধারে আছে। চলতি পথে ঝরে পড়া কাঠগোলাপ কুড়িয়ে ছাত্রীরা চুলে জড়ান।

উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ছালেকুল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, গাছপালা বেড়ে ওঠার জন্য যে ধরনের পরিবেশ দরকার, সবটাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। তা ছাড়া এখানে ভালো মানের গাছ রোপণ করা হয়, ফুলের পরিমাণও তাই বেশি হয়।