‘জীবিত’ পুঁতে রাখার এক বছর পর কঙ্কাল উদ্ধার, যেভাবে মিলল খোঁজ
এক বছর আগে সৎভাইদের সঙ্গে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন আলমগীর হোসেন (৪৫)। কোথাও হদিস মিলছিল না তাঁর। বিষয়টির কোনো কূলকিনারা পাচ্ছিল না পুলিশ। অবশেষে এক ব্যক্তির স্বীকারোক্তিতে খুলল এ ঘটনার জট। পুলিশ বলছে, জমিজমার বিরোধ নিয়ে সৎভাইদের হাতে খুন হয়েছেন আলমগীর। অপহরণের পর তাঁকে চেতনানাশক খাইয়ে জীবিত অবস্থায় পুঁতে রাখা হয়েছিল।
এ ঘটনায় জড়িত এক ব্যক্তির তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে লালমনিরহাটের আদিতমারীর পলাশীর পশ্চিম রামদেব গ্রামের একটি বাঁশঝাড়ের মাটি খুঁড়ে আলমগীরের কঙ্কাল উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসব হাড়গোড় কালীগঞ্জ থানায় নিয়ে আসা হয়েছে, যা ময়নাতদন্ত ও ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে ঢাকায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আলমগীর হোসেনের মায়ের জমি দখল নিয়ে ভোগ করে আসছিলেন তাঁর সৎভাই খেলান উদ্দিন ও আবদুস সাত্তার। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। একপর্যায়ে আলমগীরকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করে তাঁর সৎভাইয়েরা।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত একজনের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, পরিকল্পনা মোতাবেক ২০২২ সালের ১৩ জুলাই সন্ধ্যায় আলমগীরকে কৌশলে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় কালীগঞ্জের পাশের উপজেলা আদিতমারীর পশ্চিম রামদেব গ্রামে। সেখানে সৎভাই আবদুস সাত্তারের ভায়রা আবদুল আজিজ ওরফে রাশেদুল ড্রাইভার ওই গ্রামের আশরাফ আলী ও সেকেন্দার আলীর সহযোগিতায় একটি বাড়িতে আলমগীরকে কৌশলে নিয়ে কোমল পানীয়র সঙ্গে চেতনানাশক খাওয়ান। একপর্যায়ে আলমগীর চেতনা হারিয়ে ফেললে জীবিত অবস্থায়ই তাঁকে বাঁশঝাড়ের মাটিতে পুঁতে রাখা হয়।
আলমগীরের নিখোঁজের ঘটনায় তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে ২০২২ সালের ১৪ জুলাই কালীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল। এর মধ্যে আলমগীরের সৎভাই খেলান উদ্দিন ও আবদুস সাত্তার মারা গেছেন। সম্প্রতি আবদুল সাত্তারের ভায়রা পাবনার আবদুল আজিজ মুঠোফোনে আলমগীরের সহোদর সাদ্দাম হোসেনকে প্রকৃত ঘটনা জানিয়ে দেন।
বিষয়টি সাদ্দাম হোসেন কালীগঞ্জ থানা-পুলিশকে জানান। সেই সঙ্গে লালমনিরহাট আদালতে একটি হত্যা মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কালীগঞ্জ থানায় প্রেরণ করে। চলতি বছরের ১০ জুলাই কালীগঞ্জ থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। এরপর গত বুধবার ট্রাকচালক আবদুল আজিজকে রংপুরের মাহীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একই সঙ্গে রামদেব গ্রামের আশরাফ আলী ও সেকেন্দার আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এরপর আবদুল আজিজের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আলমগীর হোসেনের কঙ্কাল উদ্ধার করে কালীগঞ্জ থানার পুলিশ। এ সময় আদিতমারী থানার পুলিশের একটি দলও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমতিয়াজ কবির ও পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হাবিবুর রহমান জানান, উদ্ধার হওয়া কঙ্কাল ময়নাতদন্তের জন্য লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এরপর ডিএনএ পরীক্ষার জন্য রাজধানীর মহাখালীতে সিআইডি পুলিশের ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হবে।
গ্রেপ্তার আবদুল আজিজ, সেকেন্দার আলী ও আশরাফ আলীকে গতকাল বৃহস্পতিবার লালমনিরহাটের আদালতে তোলা হয়। তাঁদের মধ্যে পাবনার আবদুল আজিজ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সবাইকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
হত্যা মামলার বাদী সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘৯২ শতক জমির জন্য আমার ভাই আলমগীর হোসেনকে ডেকে নিয়ে কোমল পানীয়র সাথে চেতনানাশক খাইয়ে জীবিত পুঁতে দেয়। আমি লালমনিরহাটের আদালতে ১০ জুলাই হত্যা মামলা করেছি। আদালত মামলাটি কালীগঞ্জ থানায় প্রেরণ করেছেন। আমি তাদের কঠিন শাস্তি চাই।’