সাবেক মন্ত্রী মোকতাদিরকে আসামি করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আরেকটি হত্যা মামলা
সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৫৫ নেতা-কর্মীর নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে নবীনগর উপজেলা হেফাজতে ইসলামীর সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা মেহেদী হাসান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন। এতে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ৫৫ থেকে ৬০ জনকে।
২০১৬ সালের ১১ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার ছাত্র হাফেজ মাসুদ আহমেদ ওরফে মাসুদুর রহমান (২০) নিহত হওয়ার ঘটনায় সদর থানায় মামলাটি করা হয়। সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাফফর হোসেন প্রথম আলোকে মামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মাসুদুর রহমান শহরের সবচেয়ে বড় মাদ্রাসা জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়ার ছাত্র ছিলেন। তিনি নবীনগর উপজেলার বিদ্যাকুট ইউনিয়নের শেমন্তঘর গ্রামের হাফেজ ইলিয়াস চৌধুরীর ছেলে। তবে পরিবারের সঙ্গে শহরের ভাদুঘর গ্রামে থাকতেন। মামলার বাদী মেহেদী হাসান সম্পর্কে নিহত ছাত্রের খালাতো ভাই।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মো. মহসিন ও সৈয়দ তানজিল বারী; দপ্তর সম্পাদক মো. মনির হোসেন; উপদপ্তর সম্পাদক সুজন দত্ত; উপসম্পাদক মাসুম বিল্লাহ; সদস্য হাসান সারোয়ার; বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া; পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম; সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী এম এ এইচ মাহবুব আলম; জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন; সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন; জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য মাহমুদুল হক ভূঁইয়া; সাবেক গণপূর্তমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী আবু মুছা আনছারি; জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মালেক চৌধুরী প্রমুখ।
এজাহারের বর্ণনা অনুযায়ী, আসামিরা চরম ইসলামবিদ্বেষী এবং মাদ্রসা ও মাদ্রাসার ছাত্রদের প্রতি তাঁদের আক্রোশ ছিল। ২০১৬ সালের ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যার দিকে মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকেরা জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রসায় ছিলেন। সে সময় মোকতাদির চৌধুরীর নেতৃত্বে আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসায় ছাত্র-শিক্ষকদের ওপর হামলা চালান। হামলাকারীরা দেশি অস্ত্রশস্ত্র ও বিদেশি পিস্তল নিয়ে বোমা ফাটিয়ে ত্রাস ও ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করেন। মামলার ৫ নম্বর আসামি ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাসান পিস্তল দিয়ে গুলি করেন। গুলিটি মাদ্রাসাছাত্র মাসুদের পেটের বাঁ পাশ দিয়ে পেটের ভেতরে ঢুকে যায়। এত ভিকটিম লুটিয়ে নিচে পড়ে যান। গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
মামলার বাদী মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, সে সময় আসামিরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাতে ঘটাতে মাদ্রাসায় হামলা করেন। পিস্তল বের করে গুলির পর মাসুদুর রহমানকে ছাদ থেকে তাঁরা ফেলে দেন। কিন্তু তখন কেউই মামলা নিতে চায়নি। তাই এত দেরি করে মামলা করেছেন।
এদিকে ২০২১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে মাদ্রাসাছাত্র হুসাইন আহম্মেদ নিহত হওয়ার ঘটনায় সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী মোকতাদিরসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ২৬ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে গত শুক্রবার সদর থানায় আরেকটি হত্যা মামলা হয়। মামলায় আরও ২০০ থেকে ৩০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।