রাবি ছাত্রলীগ
এক কমিটিতেই ৬ বছর পার
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলন ১৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।
অর্ধযুগের বেশি সময় ধরে এক কমিটিতেই চলছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কার্যক্রম। যদিও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটির মেয়াদ এক বছর। গত ছয় বছরে কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনবার নেতৃত্ব পরিবর্তন হলেও বদল হয়নি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি।
দীর্ঘদিন ধরে নতুন কমিটি না হওয়ায় দলের ‘চেইন অব কমান্ড’ হারানোর পাশাপাশি নিষ্ক্রিয় হয়েছেন দলের অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা-কর্মী। সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শিক্ষার্থী নির্যাতন, চাঁদাবাজি, প্রক্সি–কাণ্ড, ছিনতাই, অপহরণ, আসন–বাণিজ্য, চুরি, মাদকসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার পরও নির্দিষ্ট সময়ে কমিটি না হওয়ার পেছনে স্থানীয় রাজনীতি, ক্ষমতাসীনদের আধিপত্য ও লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতিকে দায়ী করছেন সাবেক নেতা–কর্মীরা।
এদিকে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ ১৮ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলন ঘোষণা করেছে। এর আগে গত বছরের নভেম্বরে বার্ষিক সম্মেলন হওয়ার দিনক্ষণ ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় কমিটি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি।
ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ২৫তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১১ ডিসেম্বর গোলাম কিবরিয়াকে সভাপতি ও ফয়সাল আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৩ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। তখন অভিযোগ ওঠে, স্থানীয় নেতা–কর্মীদের প্রাধান্য দিয়ে ওই কমিটি করা হয়েছে। ঘোষিত কমিটির ১৩ জনের মধ্যে ৬ জনেরই বাড়ি রাজশাহী জেলায়। তাঁদের মধ্যে চারজনেরই বাড়ি রাজশাহী মহানগরে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, তিনজনের বাড়ি একই মহল্লায়। এর মূল কারণ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ওপর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ন্ত্রণকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘আমরা সব সময় সম্মেলন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। করোনা মহামারি, পরিবেশ-পরিস্থিতি অনূকূলে না থাকা ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে বেশ কয়েকবার পরিবর্তন হওয়ায় সেটি সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এখানে স্থানীয়, সমন্বয়হীনতা ও লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির কোনো কারণ ছিল না। আসন্ন ২৬তম বার্ষিক সম্মেলনে ছাত্রলীগের আদর্শ মেনে যাঁরা রাজনীতি করতে পারবেন ও যোগ্য নেতাদের কাছে আমরা নেতৃত্ব হস্তান্তর করতে চাই।’
গত বছরের ২৫ অক্টোবর এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১২ নভেম্বর শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু পরে সেই সম্মেলন কোনো এক অজানা কারণে স্থগিত করা হয়।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না হওয়ায় রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। জাতীয় দিবস ও কেন্দ্রীয় কর্মসূচির বাইরে তেমন কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি বর্তমান কমিটি। দিবসকেন্দ্রিক কর্মসূচিগুলোতেও নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি দেখা যায় খুবই নগণ্য। এ ছাড়া ক্যাম্পাস ছেড়েছেন মূল কমিটির প্রায় ৯০ শতাংশ নেতা-কর্মী। হল কমিটির শীর্ষ নেতারাও রাজশাহী ছেড়েছেন। এরই মধ্যে বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ ছাত্রলীগের রাজনীতি ছাড়তে চান। হতে চান রাজশাহী জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। ইতিমধ্যে এই পদ পেতে তিনি জীবনবৃত্তান্তও জমা দিয়েছেন।
ছাত্রলীগের সাবেক দুই নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একজন শিক্ষার্থীর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করতে সময় লাগে পাঁচ বছর। তারপর আর ওই শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব থাকে না। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি প্রায় সাত বছর ধরে চলছে। এখানে অনেকে শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদের আশায় রাজনীতি করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় অনেক নেতা-কর্মী নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। এর পেছনে স্থানীয় রাজনীতি ও ক্ষমতাসীনদের আধিপত্যকে দায়ী করছেন তাঁরা।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট, স্থানীয় অভিভাবক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মধ্যে সমন্বয় না হওয়ায় কমিটি হতে বিলম্ব হয়েছে। এ ছাড়া করোনা মহামারিও একটা উল্লেখযোগ্য কারণ। নির্দিষ্ট সময়ে কমিটি না হওয়ায় বাংলাদেশ নতুন নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বরখাস্ত সাবেক নেতা এস এম তৌহিদ আল হোসেন বলেন, বর্তমান কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সব সময় কমিটি দেওয়ার জন্য কেন্দ্রে বলেছে। কিন্তু কেন্দ্র থেকে সহযোগিতা না করার জন্য তাঁরা কমিটি দিতে পারেননি। তা ছাড়া করোনা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন বাধা হিসেবে কাজ করছে।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লায়েব উদ্দিন বলেন, ছাত্ররাজনীতিতে নিয়মতান্ত্রিকভাবে নিয়মিত কমিটি হওয়া দরকার। এতে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটবে। দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না হওয়া হতাশা ও দুর্ভাগ্যজনক।