গ্রামীণ সড়কের পাশে তিনটি ঘুঘু পাখির ছানার পরিচর্যা করছেন ফরহাদ হোসেন। পাখির পরিচর্যা চলছে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নের কাফুড়া গ্রামে। শনিবার উপজেলার গাড়িদহ ও খামারকান্দি ইউনিয়নে সরেজমিনে গেলে বিভিন্ন গাছের ডালে দেখা মেলে অসংখ্য প্রজাতির পাখি। শত শত পাখির কলতানে মুখর ওই এলাকা।
ঘুঘু পাখির ছানা পরিচর্যায় ব্যস্ত ফরহাদ হোসেন শেরপুর পরিবেশ প্রতিরক্ষা সংস্থার সাধারণ সম্পাদক । তিনি বগুড়ার আজিজুল হক কলেজের ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ছাত্র। তাঁর বাড়ি উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নের কাফুড়া গ্রামে।
ফরহাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিন আগে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে শেরপুরে ব্যাপক ঝোড়ো হওয়া ও বৃষ্টি হয়েছে। এতে উপজেলার গাড়িদহ ও খামারকান্দি ইউনিয়নের একাধিক গাছের ডালপালা ভেঙে পড়েছে। ভেঙে পড়া একটি গাছে দুটি ঘুঘু পাখি ও একটি কাঠশালিকের বাসা ছিল। পাখির এই বাসাগুলোতে ছিল পাখির ছানা। ঝোড়ো হওয়ায় গাছের ডালপালা ভেঙে পড়ায় পাখির ছানা মাটিতে পড়ে আহত হয়। স্থানীয় মানুষেরা এসব ছানা উদ্ধার করে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে চিকিৎসকের পরামর্শে উদ্ধার হওয়া ১০টি ছানা তাঁদের সংগঠনের উদ্যোগে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পাখিগুলোর মধ্যে কাঠশালিকের ছানা তিন দিন পরিচর্যার পর সুস্থ হয়। এরপর সেটিকে আকাশে উড়িয়ে দেওয়া হয়। ঘুঘুর তিনটি ছানা এখনো উড়তে শেখেনি। এ জন্য তাঁরা এই ছানা তিনটিকে বাড়িতেই পরিচর্যা করছেন। ওরা শিখলেই উড়িয়ে দেওয়া হবে আকাশে।
উপজেলা পরিবেশ ও প্রতিরক্ষা সংস্থা সংগঠনের সভাপতি সোহাগ রায় প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের এই সংগঠন ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। তাঁরা শেরপুর উপজেলা পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও শেরপুর পৌর শহরে তাঁদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে ভারী বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় আহত পাঁচ শতাধিক পাখিকে উদ্ধার-পরবর্তী পরিচর্যা করে মুক্ত আকাশে উড়িয়ে দিয়েছেন তাঁরা। স্থানীয় বন বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর পাখির চিকিৎসা ও পরিচর্যার কাজে সহায়তা করে। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গ্রামের মানুষ ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বৈঠক অব্যাহত রেখেছেন তাঁরা।
উপজেলার কাফুড়া, হুসনাবাদ, শালফা, গোপালপুর ও খাগা গ্রামের ১০ কৃষক বলেন, তাঁরা আগে দেখেছেন, শহরের যুবকেরা বন্দুক নিয়ে (এয়ারগান) গ্রামে পাখি শিকার করতেন। এখন পরিবেশবাদী শেরপুর পরিবেশ প্রতিরক্ষা সংস্থার সদস্যদের কারণে গ্রামের মানুষ যেন পাখি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এগিয়ে এসেছেন। এ জন্য কেউ বন্দুক নিয়ে পাখি শিকার করতে গ্রামগুলোতে কাউকে আসতে দেখা যায় না।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রেহানা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, সম্প্রতি ঝড়ে গাছের ডালপালা ভেঙে কয়েকটি পাখির ছানা আহত হয়। পাখির ওই ছানাগুলোকে উদ্ধার করে শেরপুর পরিবেশ প্রতিরক্ষা সংস্থার সদস্যরা চিকিৎসা দিয়েছেন। এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের এমন উদ্যোগ তাঁদের কাছেও ভালো লেগেছে।