সিলেটে গৃহকর সহনীয় করার ঘোষণা মেয়রের
সিলেটে গৃহকর সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছেন সিটি মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। আজ রোববার দুপুরে নগর ভবনের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ বিষয়টি জানান।
সিটি মেয়র বলেছেন, আগামী সপ্তাহ থেকে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করে গৃহকর নির্ধারণ নিয়ে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে পুরোনো ২৭টি ওয়ার্ডে রিভিউ বোর্ড গঠন করা হবে। আপত্তিসংক্রান্ত আবেদন গ্রহণের সময় ২৮ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। আবেদন রিভিউয়ের মাধ্যমে গৃহকর সহনীয় পর্যায়ে আনা হবে। এ ছাড়া নতুন ১৫টি ওয়ার্ডে অ্যাসেসমেন্ট স্থগিত করা হয়েছে।
এর আগে পঞ্চবার্ষিক কর পুনর্মূল্যায়নের পর গত ৩০ এপ্রিল সিটি করপোরেশন নতুন নির্ধারিত গৃহকর অনুযায়ী ভবনমালিকদের গৃহকর পরিশোধের নোটিশ দেওয়া শুরু করে। পরে নগরের প্রায় পৌনে এক লাখ ভবনমালিকের গৃহকর ৫ থেকে ৫০০ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী বাসিন্দারা। এ নিয়ে নগরজুড়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এর পর থেকে প্রতিদিন নগরের বিভিন্ন সংগঠন গৃহকর বাতিলের দাবিতে নিয়মিত আন্দোলন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন শুরু করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনের আগে সিটি করপোরেশনের ৪২টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের নিয়ে সিটি করপোরেশনের সাধারণ সভা হয়। ওই সভায় গৃহকর সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান জানান। তিনি আরও বলেন, ‘সিলেটের সচেতন নাগরিক ও কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলোচনা করে গৃহকরের বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হবে। এ বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে আমাদের পরিষদের আলোচনা হয়েছে। সর্বসম্মতিক্রমে সহনীয় মাত্রায় গৃহকর নির্ধারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’
সিটি মেয়র সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, ‘করারোপ নিয়ে যাঁরা আপত্তি করেছেন, তাঁদের আবেদন শতভাগ স্বচ্ছতার মাধ্যমে রিভিউ করা হবে। আমরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েই আমরা কাজ করব। এখানে কারও প্রতি অবিচার করা হবে না। যেকোনো বিষয়ে নাগরিকদের মতামতের ভিত্তিতে কাজ করবে সিটি করপোরেশন। ইতিমধ্যে যাঁরা অভিযোগ ও স্মারকলিপি দিয়েছেন, তাঁদের অভিযোগ গুরুত্বসহকারে স্বচ্ছতার মাধ্যমে দেখা হবে। সবার সহযোগিতায় এ বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হবে।’
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, অনেক প্রভাবশালী কোনো দিন কর পরিশোধ করেননি। অনেকে আবার অনেক বছর ধরে নিয়মিত কর পরিশোধ করেন না। এভাবে চললে সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন হবে কীভাবে।
মেয়রের সংবাদ সম্মেলনের আগে বেলা ১১টায় সাধারণ সভায় গৃহকর নিয়ে আপত্তিসংক্রান্ত আবেদন জমাদানের সময়সীমা ১৪ মে থেকে বাড়িয়ে ২৮ মে পর্যন্ত করা হয়। সভায় জানানো হয়, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সিটি করপোরেশন থেকে গৃহকর-সংক্রান্ত তথ্য নিয়েছেন ২৪ হাজার ৪৬৭ জন। এর মধ্যে পৌনে এক লাখ ভবনমালিকের মধ্যে আপত্তি ফরম সংগ্রহ করেছেন ২২ হাজার ৪৪০ জন। ৩০ এপ্রিল থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট বকেয়া আদায় হয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা।
এদিকে সিলেট মহানগর বিএনপি দুপুরে নগরের চৌহাট্টা এলাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে গৃহকর বাড়ানোর প্রতিবাদে মানববন্ধন করে। মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীর সঞ্চালনে এ সময় সমাবেশ হয়। বক্তারা বলেন, নগরে গৃহকর একলাফে ৫ থেকে ৫০০ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বিএনপি গৃহকরের বিপক্ষে নয়। তবে তা হতে হবে সহনীয় পর্যায়ে।
কর্মসূচিতে নগরের ৪২টি ওয়ার্ডের বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বক্তব্য দেন মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ মিসবাহ উদ্দিন, সৈয়দ মঈনুদ্দিন সোহেল, জিয়াউল হক ও আমির হোসেন, মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ সাফেক মাহবুব, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য মুর্শেদ আহমদ, মহানগর যুবদলের সভাপতি নেওয়াজ বক্ত, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহবুবুল হক চৌধুরী প্রমুখ।
বেলা তিনটার দিকে বাংলাদেশ জাসদ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) নতুন গৃহকর বাতিল করে যৌক্তিক গৃহকর পুনর্নির্ধারণের দাবিতে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী জাকির আহমদ, গিয়াস উদ্দিন, সাইফুল আলম, নাজাত কবির, লাল মোহন দেব, শৈলন দে, প্রবীর দে, চৌধুরী শাহেদ কামাল টিটো, চৌধুরী দেলওয়ার হোসেন জিলন, এম এইচ শিবলী, প্রিন্স বাহার চৌধুরী, রিয়াজ উদ্দিন, ফেরদৌস আরবী, এম সিরাজুল ইসলাম, শৈশব তালুকদার, আনোয়ার হোসেন, মাসুক আহমদ প্রমুখ।