গাইবান্ধায় ২৯ হাজার পরিবার পানিবন্দী, ৭০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ

বন্যায় ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। নৌকাযোগে ঘরের চালা নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন লোকজন। আজ শুক্রবার সকালে গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের খারজানি এলাকা থেকে তোলাছবি: প্রথম আলো

ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে গাইবান্ধার চারটি উপজেলার ২৭টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ২৯ হাজার পরিবার। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় নদীতীরবর্তী ৭০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে জেলায় ১৮১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

আজ শুক্রবার সকালে গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নে সরেজমিন দেখা গেছে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগের চিত্র। ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে চরাঞ্চলে নির্মিত ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। অনেক টিনশেড ঘর বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। অনেকে নৌকায় করে ঘরের চাল নিরাপদে সরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ আসবাব ও ধান-চাল উঁচু জায়গায় আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে আসছেন।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গাইবান্ধার চারটি উপজেলার ২৭টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ৫টি, সুন্দরগঞ্জে ৭টি, সাঘাটায় ৮টি ও ফুলছড়িতে ৭টি। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে মোট ২৮ হাজার ৯২৮টি পরিবার। এর মধ্যে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৫১৮টি, সুন্দরগঞ্জে ৪ হাজার ৭০০টি, সাঘাটায় ১৩ হাজার ২৯০টি ও ফুলছড়িতে ৭ হাজার ৪২০টি। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলায় ১৮১টি স্থায়ী ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ২৪টি, সুন্দরগঞ্জে ৪৮টি, সাঘাটায় ৩৬ এবং ফুলছড়িতে ২৩টি, সাদুল্ল্যাপুরে ৩৩টি, পলাশবাড়ীতে ৬টি ও গোবিন্দগঞ্জে ১১টি।

কামারজানি ইউনিয়নের খারজানি গ্রামের আবদুল খালেক (৪৫) বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে নদীর পানি খুব বাড়ছে। রাতে আমাদের বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। রান্না করতে পারছি না। খুবই কষ্টে আছি।’ কুন্দেরপাড়া গ্রামের কৃষক চান মিয়া (৬০) বলেন, ‘কষ্ট করে খাবারের ব্যবস্থা করছি। কিন্তু প্রাকৃতিক কাজ সারতে সমস্যায় পড়েছি। বিশেষ করে নারীরা দুর্ভোগে পড়েছেন বেশি।’

এসব বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জুয়েল মিয়া বলেন, বন্যাকবলিত চারটি উপজেলায় এ পর্যন্ত জেলা প্রশাসন ৩ হাজার ৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার, ১৬৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে। এসব বিতরণ শুরু হয়েছে। পানিবন্দীদের উদ্ধারের জন্য নৌকা, স্পিডবোট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উদ্ধার কার্যক্রম চলছে। জেলা ও উপজেলায় নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে। ইউনিয়নভিত্তিক বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় মেডিকেল টিম, কৃষি টিম, স্বেচ্ছাসেবক টিম ও লাইভস্টোক টিম গঠন করা হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম জানান, জেলার চারটি উপজেলার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গতকাল থেকে পানিতে নিমজ্জিত। এ কারণে ৭০টি বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। ১৫টি বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিদ্যালয়ে আগের মতো পাঠদান কার্যক্রম চালু করা হবে।

নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে গাইবান্ধার চারটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আজ শুক্রবার গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের খারজানি গ্রাম থেকে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

গাইবান্ধা পাউবোর নিয়ন্ত্রণকক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আজ দুপুর ১২টা থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখঘাট পয়েন্টে ১৯ সেন্টিমিটার, ঘাঘট নদের পানি জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার, করতোয়ার পানি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার চকরহিমাপুর পয়েন্টে ২২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকালের তুলনায় আজ পানি কম বেড়েছে। একই সময়ে তিস্তার পানি সুন্দরগঞ্জ উপজেলা-সংলগ্ন কাউনিয়া পয়েন্টে ২১ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়েছে।

আজ দুপুর ১২টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার ও ঘাঘটের পানি বিপৎসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল। একই সময়ে করতোয়ার পানি ১৪০ সেন্টিমিটার ও তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। অপর দিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, নদ-নদীর পানি বাড়লেও আপাতত বড় বন্যার আশঙ্কা নেই। উজানের ঢলে ও ভারী বৃষ্টির কারণে নদীর পানি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলার অন্যতম দুই নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে এবং দুটির পানি বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।