সখীপুরের মাটিতে দার্জিলিং কমলা চাষের চার বছর পর ভালো ফলন পেলেন নজরুল
গাছে গাছে ঝুলছে কমলা। কোনোটি পেকে হলুদ হয়ে গেছে। কোনোটি এখনো সবুজ। বিক্রির জন্য বেছে বেছে বাগান থেকে পাকা কমলাগুলো তুলে থলেতে ভরছেন নজরুল ইসলাম তালুকদার। বাগান করার চার বছর পর এই প্রথম তাঁর গাছে ব্যাপক কমলা ধরেছে। বিক্রি করে আয়রোজগারও ভালো হচ্ছে।
টাঙ্গাইলের সখীপুর পৌর শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গড়গোবিন্দপুর মুসল্লিচালা এলাকায় নজরুল ইসলামের কমলার বাগান। প্রথমবারের মতো উপজেলায় দার্জিলিং জাতের কমলার ভালো ফলন দেখতে আসছেন অনেকে। অনেকে কমলাবাগানে এসে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করছেন। উৎসাহী হয়ে অনেকেই সুস্বাদু এই কমলা চাষের উদ্যোগ নিচ্ছেন।
এক সময় প্রবাসে ছিলেন নজরুল ইসলাম তালুকদার। তিনি জানান, নব্বই দশকে দক্ষিণ কোরিয়ায় ১০ বছর কাটানোর পর দেশে ফিরে ঢাকার সাভারে ছোট একটি পোশাক কারখানা করেছিলেন। সেখানে ১০ বছর ব্যবসা করে লোকসান গুনে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। ২০২০ সালে করোনাকালে আরও হতাশ হয়ে পড়েন। ওই সময় ইউটিউবে চুয়াডাঙ্গার এক কৃষকের কমলার বাগান দেখে তিনি উদ্বুদ্ধ হন। চুয়াডাঙ্গা থেকে চারা কিনে এনে তাঁর এক একর পতিত জমিতে শুরু করেন কমলা চাষ। একই বাগানে তিনি পেয়ারা ও মাল্টা চাষও করেন। চার বছর পর এবারই প্রথম গাছগুলোয় ফল এসেছে। প্রতিটি গাছে ৪০ থেকে ৩ শতাধিক করে কমলা ধরেছে।
নজরুল ইসলাম বলেন, সখীপুরে আরও কয়েকজন কমলার বাগান করেছেন। তবে তাঁরা তেমন সফল হতে পারেননি। তাঁর বাগানে সর্বোচ্চ তিন শতাধিক কমলা ধরেছে একটি গাছে। বাগানে গাছের সংখ্যা আড়াই শতাধিক। প্রথমবার ফলন কম। সামনে ফলন আরও বাড়বে বলে তাঁর ধারণা। তিনি আরও কিছু জমিতে নতুন করে মিষ্টি জাতের কমলা বাগান করার পরিকল্পনা করছেন।
নজরুল ইসলামের সাফল্য দেখে নিজ এলাকা তো বটেই, আশপাশের বিভিন্ন এলাকার লোকজন কমলা চাষে উৎসাহী হচ্ছেন। ওই বাগানেই কথা হয় সখীপুর পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ওমর ফারুকের সঙ্গে। তিনি বলেন, নজরুলের বাগানের কমলা ভালো ফলন দেখে তিনি নিজেও কমলা চাষের উদ্যোগ নিয়েছেন। কমলার বাগান করার জন্য এক একর জমি প্রস্তুত করেছেন। ওই শিক্ষক কমলাবাগান পরিদর্শন শেষে তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বাগান দেখে মনে হয়েছে যেন ভারতের এক টুকরা দার্জিলিং।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাগানের ছবি ও ভিডিও দেখে দূরদূরান্ত থেকেও উৎসাহী লোকজন আসছেন কমলার বাগান দেখতে। মির্জাপুর উপজেলার বাঁশতৈল গ্রামের মোবারক হোসেন জানান, তিনিও কমলাবাগান করতে আগ্রহী। নজরুলের বাগানে ভালো ফলন হয়েছে শুনে দেখতে এসেছেন।
নজরুল ইসলাম তালুকদার জানান, প্রথমবার, তাই অনেক কমলা আত্মীয়স্বজন, এলাকার মানুষ, দেখতে আসা উৎসাহী মানুষদের দিচ্ছেন। ইতিমধ্যেই বাগান থেকেই ২০০ টাকা কেজি দরে ২০ হাজার টাকার কমলা বিক্রি করছেন। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই তিনি লক্ষাধিক টাকার কমলা বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন। তিনি আরও বলেন, ‘যখন কমলাবাগান করি, তখন অনেকেই নানা কটূক্তি করতেন। তাঁরা বলতেন এই এলাকায় কখনো মিষ্টি কমলা হবে না। কিন্তু আমার বাগানের কমলার ফলনে প্রমাণিত হয়েছে যে এখানেও মিষ্টি জাতের ভালো কমলার ফলন হওয়া সম্ভব।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিয়ন্তা বর্মন প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার বেশির ভাগ এলাকায় ছোট ছোট টিলা রয়েছে। এ অঞ্চলের মাটি কমলা চাষের উপযোগী। কৃষি বিভাগ থেকে কমলাগাছ রোপণ ও পরিচর্যার বিষয়ে চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া মাঠপর্যায়ের কর্মীরা কৃষকদের কমলা চাষের বিষয়ে পরামর্শও দিচ্ছেন।