নিখোঁজের দুই দিন পর ধানখেত থেকে কিশোরের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার
রাজবাড়ী সদর উপজেলায় নিখোঁজের দুই দিন পর আজ মঙ্গলবার সকালে এক কিশোরের ক্ষতবিক্ষত ও পোড়া লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। উপজেলার ভবদিয়া গ্রামের একটি মাল্টাবাগান–সংলগ্ন ধানখেত থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
মারা যাওয়া শিশুটির নাম মিনহাজুল ইসলাম (১২)। সে সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের পূর্ব ভবদিয়া গ্রামের আজাদ শেখের ছেলে। গত রোববার বিকেল থেকে সে খেলার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়।
স্থানীয় লোকজন জানান, মিনহাজুল পড়াশোনা করত না। সমবয়সী ছেলেদের সাথে খেলাধুলা ছাড়া কেউ গাছের ফল পাড়ার জন্য মিনহাজকে বললে তাৎক্ষণিকভাবে করে দিত। গত রোববার বিকেলে খেলাধুলা করতে গিয়ে নিখোঁজ হয় মিনহাজুল। দুই দিন পর আজ মঙ্গলবার সকালে বাড়ির অদূরে মাল্টাবাগান–সংলগ্ন ধানখেত এলাকার কয়েকজন লোক তাঁর ক্ষতবিক্ষত লাশ দেখতে পেয়ে সবাইকে জানায়।
সরেজমিন মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দেখা যায়, মিনহাজুলদের বাড়ির সামনে রাস্তায় কয়েক শ মানুষ ভিড় করছে। তারা মিনহাজ হত্যার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করছে। মিনহাজের মা আহাজারি করছেন। অনেকে তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ সময় অনেকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তদন্তপূর্বক মিনহাজ হত্যাকাণ্ডের দাবি জানান।
মিনহাজের সমবয়সী বন্ধু সুমন শেখ জানান, ‘রোববার বিকেলের আগপর্যন্ত একসাথে ছিলাম। বাগান থেকে কিছু মাল্টা আনার পর বিকেল চারটার দিকে মিনহাজুল আবার বাগানে যাওয়ার কথা বলে। আমি রাজি না হলে ওর জুতা আর কিছু ফল আমার কাছে রেখে চলে যায়। এরপর সে আর ফেরেনি।’
মিনহাজের মা খাদিজা বেগম আহাজারি করে ছেলে হত্যার বিচার দাবি করে বলেন, ‘মুক্তার সরদারের মাল্টাবাগানে আমার ছেলে গেছিল বলে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে পুড়িয়ে মারছে। আমার ছেলে বাগানে আছে কি না, জানতে বারবার তাদের কাছে বাগানে ঢোকার গেটের চাবি চাইলেও দেননি। ছেলের খোঁজ না পাওয়ায় এলাকায় মাইকিং করানো হয়। তারা আমার ছেলেকে বাগানের ভিতর মেরে গুম করে রাখে।’
সরেজমিনে দেখা যায়, মাল্টাবাগানটি মিনহাজুলদের বাড়ি থেকে প্রায় ৫০০ গজ পূর্বে কৃষিজমিতে। চারদিকে ধানখেত। খেতের মাঝে মিশ্রিত ফলের বাগান। বাগানের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া। প্রবেশ করতে একটি লোহার তৈরি গেটের ওপর সাদা কাগজে লেমেনিং করা লেখা ‘এই বাগানটির চারপাশে বিদ্যুৎ দেওয়া আছে, দয়া করে কেউ বাগানে প্রবেশ করবেন না’।
রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহামুদুর রহমান বলেন, প্রাথমিক ধারণা মাল্টাবাগানে প্রবেশ করতে গিয়ে কাঁটাতারের সঙ্গে বিদ্যুৎ–সংযোগ থাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মিনহাজুল মারা গেছে। লাশটি বাগানের পাশের ধানখেত থেকে ক্ষতবিক্ষত এবং পোড়া অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর কারণ বলা যাবে। পরবর্তী আইনগত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।