কালিয়াকৈরে সাপের কামড়ে মৃত ব্যক্তিকে ঝাড়ফুঁক দিয়ে জীবিত করার চেষ্টা
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে রাতে বিলের পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে সাপের কামড়ে সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি মারা যান। মৃত ওই ব্যক্তিকে কড়ি চালান দিয়ে সুস্থ করা সম্ভব, এমন আজব তথ্য দিয়ে ব্যাপক আয়োজন চালাচ্ছেন এক কবিরাজ। এমন খবরে হাজারো উৎসুক মানুষ সেখানে ভিড় জমান। আজ শনিবার বিকেল থেকে কালিয়াকৈরের বাসুরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। রাত সাড়ে নয়টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মৃতের জানাজা বা ঝাড়ফুঁক কিছুই হয়নি।
এর আগে গতকাল শুক্রবার রাতে সাইফুল ইসলামকে সাপে কামড় দেওয়ার পর প্রথমে কবিরাজের কাছে নিয়ে ঝাড়ফুঁক দেওয়া হয়। পরে রাতেই তাঁকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে কুমুদিনী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সকালে তিনি মারা যান। এরপর মৃত ব্যক্তিকে বাড়িতে এনে ঝাড়ফুঁক দিয়ে জীবিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন এক কবিরাজ। মৃত সাইফুল ইসলাম (৪০) বাসুরা গ্রামের ইউনুছ আলীর ছেলে।
এলাকাবাসী ও নিহতের স্বজনেরা জানান, সাইফুল গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাতে টেঁটা নিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে মাছ ধরতে বাড়ির পাশের একটি বিলে যান। মাছ ধরতে যাওয়ার পথে হঠাৎ সাইফুলকে তাঁর বাঁ পায়ে বিষধর একটি সাপ কামড় দেয়। এরপর সঙ্গে থাকা অন্য ব্যক্তি টেঁটা দিয়ে সাপটি মেরে ফেলেন। পরে মৃত সাপটি নিয়ে সাইফুল বাড়িতে ফিরে স্বজন ও এলাকাবাসীকে সাপে কামড় দেওয়ার ঘটনাটি জানান। পরে স্বজনেরা তাঁকে কবিরাজের কাছে নিয়ে যান। ঝাড়ফুঁক শেষে কবিরাজের বাড়ি থেকে রাতেই তাঁকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সকালে তাঁর মৃত্যু হয়।
কালিয়াকৈর উপজেলার ঢালজোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইছামুদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মাছ ধরতে গিয়ে বিষধর সাপের কামড়ে সাইফুল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে।
আজ সন্ধ্যায় বাসুরা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মৃত সাইফুলকে জীবিত করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন কবিরাজ। বাড়ির পাশে একটি খেতে চারটি কলাগাছ পুঁতে রাখা হয়েছে, চার পাশে ঘেরাও করে কয়েকটি নতুন সিলভারের পানির কলস বসানো হয়েছে। কলাগাছের চার কোনায় চারটি গ্লাসে দুধ ও একটা মহিষের শিং রাখা হয়েছে। রাতের আঁধার দূর করতে একাধিক বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুঁতে রাখা চারটি কলাগাছের মধ্যে টেবিলের ওপর মৃত সাইফুলের লাশ রাখা। পাশে রাখা হয়েছে মৃত সাপটি। এভাবেই কবিরাজ তাঁকে জীবিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। খবর পেয়ে বাসুরা পশ্চিমপাড়া বাইতুন নুর জামে মসজিদ এলাকার আশপাশে কয়েকটি গ্রামের মানুষ সেখানে ভিড় করছেন।
স্থানীয় মসজিদের ইমাম আবদুল জলিল বলেন, মৃত সাইফুলের জানাজার জন্য দুপুরে এলাকার মাইকে ঘোষণা করা হয়। কবরও খোঁড়া হয়েছে। কাফনের কাপড় পরানো হয়েছিল। হঠাৎ এক কবিরাজ এসে মৃত সাইফুলকে দেখে চিকিৎসার মাধ্যমে তাঁকে জীবিত করা সম্ভব বলে স্বজনদের জানান। পরে স্বজনেরা কবিরাজের কথা বিশ্বাস করে ঝাড়ফুঁকের আয়োজন করেছেন।
নিহত সাইফুলের সহকর্মী টাইলস মিস্ত্রি জাকির হোসেন বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণার পর সাইফুলকে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে করে গ্রামে আনা হয়। এক কবিরাজ মরদেহ দেখে বলেন, ‘এটা ডেড বডি হয় নাই। আমরা কড়ি চালান দেব। রাত ৮টা থেকে ১২টার মধ্যে কড়ি চালান দিয়ে তাঁকে সুস্থ করা সম্ভব।’
তবে ঘটনাস্থলে ওই কবিরাজকে পাওয়া যায়নি। ঝাড়ফুঁক দেওয়ার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনতে তিনি সাভারে গিয়েছেন বলে স্থানীয় লোকজন জানান। উপজেলার বেনুপুর এলাকার আরমান হোসেন বলেন, ‘জানাজা হওয়ার কথা ছিল। কবিরাজ নাকি সাত দিন আগের সাপে কাটা মানুষকেও জীবিত করতে পারেন। এর পর থেকে এই আয়োজন চলছে।’ আনোয়ার হোসেন নামের একজন বলেন, ‘এই আধুনিক যুগে এমন কুসংস্কার মেনে নেওয়া যায় না। অবশ্যই এলাকার সচেতন মানুষ ও প্রশাসনের উচিত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।’
জানতে চাইলে চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাপে কাটা কোনো ব্যক্তিকে চিকিৎসকদের মৃত ঘোষণা করার পর কোনো চিকিৎসায় তাকে জীবিত করার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এটা সমাজের কুসংস্কার। যত দ্রুত সম্ভব, তাঁর দাফন সম্পন্ন করা উচিত।’
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ এফ এম নাসিম বলেন, ‘একজন যুবককে সাপে কেটেছে সকালেই শুনেছি। যেহেতু তাঁর পরিবারের আত্মবিশ্বাস, যদি ওঝা ভালো করতে পারেন, সে জন্য এমন আয়োজন করেছে। উৎসুক জনতার ভিড় আছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’